করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে মোংলা
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:২৪
মোংলা (বাগেরহাট): করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে মোংলা বন্দর। চীনা নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ যাতায়াত এ বন্দরে, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে বিদেশি জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই কাজ করতে গিয়ে নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। তবে ভাইরাস প্রতিরোধে বন্দর জেটিতে নেওয়া হয়েছে সামান্য প্রাথমিক প্রস্তুতি। তবে এ প্রস্তুতি ‘হাস্যকর’ বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে এ বন্দরে ৪ থেকে ৫ বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসছে। আর প্রতিটি জাহাজে নাবিকের সংখ্যা থাকে ৩০ থেকে ৪০ জন। সেই হিসেবে এ বন্দরে গড়ে নতুন করে দেড় শতাধিক বিদেশি নাগরিকের আগমন ঘটে। অপরদিকে, পণ্য খালাস-বোঝাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন। বর্তমানে এ বন্দরে ১৮টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে চীনাসহ রয়েছে বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এ ছাড়া মোংলা ইপিজেড ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পেও কাজ করছেন অসংখ্য চীনা নাগরিক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধুমাত্র বন্দর জেটিতে আসা জাহাজে যাতায়াতকারী শ্রমিক ও বিদেশি নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু বহিঃনোঙ্গরে থাকা জাহাজের নাবিক ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। বিভিন্ন প্রয়োজনে চীনাসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকরা প্রয়োজনীয় কাজে লোকালয়ের হাট-বাজারে আসছেন। বিশেষ করে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের হাট-বাজারে যাতায়াতে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল সংকটের কারণে শুধুমাত্র বন্দর জেটিতে বসানো হয়েছে লেজার ডিটেক্টেট স্ক্যানার।
বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল জানান, বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পর পণ্য খালাস-বোঝাই কাজে যেতে হতে হচ্ছে এজেন্ট, কাস্টম, ইমিগ্রেশন পুলিশ, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় শ্রমিকদের। অথচ বন্দরে আসা বিদেশি নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। এক্ষেত্রে বিদেশি নাবিকদের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের আধুনিকায়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
মোংলা পোর্ট হেলথ (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়) মেডিকেল অফিসার সুফিয়া খাতন জানান, তাদের কাছে দু’টি লেজার ডিটেক্টেট স্ক্যানার রয়েছে। একটি জেটিতে অপরটি জাহাজে পাঠানো হয়। তবে বহিঃনোঙ্গরে আসা জাহাজে স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছাতে পারে না।
এ ব্যবস্থা অপ্রতুল স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দফতরে জনবল সংকট রয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহারসহ বিদেশি নাবিকদের সংস্পর্শে না যাওয়ার জন্য।’ এ অবস্থায় সচেতনতার বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আব্দুল হামিদ জানান, বন্দর হাসপাতাল ও মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৃথক দু’টি আইসোলেট রুম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বহন বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা যায় সেই লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগের একটি। তবে এ সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম বাংলাদেশ শিপিং করপোরশেনের আওতাধীন মোংলা পোর্ট হেলথ বিভাগ পরিচালনা করছে। বন্দর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই সব কার্যক্রম তদারকি করছে মাত্র।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডর শেখ ফখর উদ্দন জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে, পণ্য থেকে নয়। তাই প্রাথমিক ভাবে এ বন্দরে আসা চীনাসহ বিদেশি নাবিক এবং নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের বন্দর জেটিতে স্ক্যান করার ব্যবস্থা আছে। বন্দরের উন্নয়নমুখী ড্রেজিং প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন প্রায় অর্ধশত চীনা নাগরিক। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হলে তারা নিজ দেশে পৌঁছাবেন। তাই এ সময়ের মধ্যে তাদের চীনে যাতায়াতের সম্ভবনা খুবই কম।
মোংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মাদ সেলিম শেখ জানান, মোংলা ইপিজেডে একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে অসংখ্য চীনা নারী-পুরুষ কর্মরত। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাগজপত্রের সার্বিক কাজ করে থাকেন দোভাষিরা। তাই কাস্টমসের সঙ্গে চীনা নাগরিকসহ বিদেশি নাবিকদের খুব বেশি সম্পৃক্ততা নেই। তবে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে যাতায়াতকারী কাস্টমস পিওসহ নিজেদের স্টাফ ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সতর্কতা প্রস্তুতির বিষয়ে নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে।
মোংলা ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবু আহম্মেদ সিদ্দিক জানান, ইপিজেডের অভ্যন্তরে ৮ থেকে ১০টি চীনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে কাজ করছেন অন্তত ৪০ থকে ৪৫ জন চীনা নাগরিক। আর তাদের এ সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক দেশীয় শ্রমিক। এখানে অবস্থানকারী চীনা নাগরিকরা নিজেরাই নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। তবে নতুন করে তাদের নিজ দেশে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত শ্রমিকরা সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।