Saturday 09 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউসিবিএল’র ভল্ট ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল: পুলিশ


৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:৫০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ইউনাটেইড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) কদমতলী শাখায় দুর্বৃত্তরা ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ভল্টে গচ্ছিত টাকা লুট হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ইউসিবিএল’র বিশেষজ্ঞ টিম এসে ভল্ট খোলার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ব্যাংকের মূল ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করে ভল্ট ভাঙার চেষ্টা যারা করেছে, তারা খুবই দক্ষ বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ‍দুপুর ১২টার দিকে হটলাইন-৯৯৯ এ ফোন পেয়ে নগরীর ধনিয়ালা পাড়া এলাকায় বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশে ‘বায়তুশ শরফ জিলানি মার্কেট’ নামে ভবনটিতে যায় স্থানীয় ডবলমুরিং থানা পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশন (পিবিআই) এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের টিমও।

বিজ্ঞাপন

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ সারাবাংলাকে জানান, আব্দুল হাইয়ের মালিকানাধীন পাঁচতলা ভবনটির নিচতলায় মেশিনারিজ সামগ্রীর কয়েকটি দোকান আছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ইউসিবিএল’র শাখা অফিস। চতুর্থ তলায় আছে মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস। পঞ্চম তলায় একটি এনজিও’র অফিস করার কথা বলে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তবে অফিস এখনও হয়নি। এছাড়া সেখানে বাড়ির মালিকের গাড়িচালকসহ আরও কয়েকজন ব্যাচেলর থাকতেন।


ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওসি সদীপ জানান, দুপুর ১২টার দিকে দুপুরের শিফটের নিরাপত্তা কর্মী ব্যাংকে এসে দেখেন দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মী নওশাদ মিয়া (৪৩) প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় তিনি বিষয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হুমায়ন মোহাম্মদ মোরশেদকে জানান। ব্যাংকের কর্মকর্তারা হটলাইনে ফোন করে জানান। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। নওশাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি বারবার অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। তাকে খুব ক্লান্ত ও দুর্বল দেখাচ্ছিল। নওশাদ কোনো তথ্য দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। পুলিশ তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় ব্যাংকের ফটকে লাগানো তিনটি তালা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানে নতুন একটি তালাও লাগিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।

ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর পুলিশের উপ-কমিশনার ডিসি-(পশ্চিম) ফারুকুল হক জানান, সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে যাবার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা ব্যাংকের গেইটে দুর্বৃত্তদের লাগানো তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। ব্যাংকের ভেতরে আসবাবপত্রসহ প্রায় সবকিছুই অক্ষত পাওয়া গেছে। তবে ভল্ট খোলার চেষ্টার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। এজন্য ভল্টের নির্ধারিত চাবি দিয়ে সেটি খোলা যাচ্ছে না। পুলিশের পক্ষ থেকে ইউসিবিএল’র ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা এক্সপার্ট টিম পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। সেই টিম পৌঁছার পর ভল্ট খুললে সেখানে গচ্ছিত টাকা খোয়া গেছে কি না নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ব্যাংকের দারোয়ান অজ্ঞান শুনে এলো পুলিশ, দরজায় নতুন তালা

ডিসি ফারুকুল আরও জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের ভেতরে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো বাঁকা করে রেখে যায়। ক্যামেরার ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারের (ডিভিআর) হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে গেছে। এতে তাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা খুবই সুদক্ষ এবং পরিকল্পিতভাবেই তারা কাজটি করেছে। তাদের চেহারা যাতে শনাক্ত না হয়, সেজন্য তারা ডিভিআর খুলে নিয়ে গেছে।


সেখানে থাকা ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, ভল্ট দেখে তাদের ধারণা- সেটি শাবল দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছিল। এজন্য চাবি দিয়ে খোলার অংশটি বাঁকা হয়ে গেছে। নির্ধারিত চাবি দিয়েও সেটি খোলা যাচ্ছে না। ভল্টে প্রবেশের জন্য তিনটি স্তর পার হতে হয়। ভল্টে হাত পড়লেই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভিন্নস্থানে সিকিউরিটি অ্যালার্ম বাজে। এক্ষেত্রে ইউসিবিএল’র কর্মকর্তারা কোনো সিকিউরিটি অ্যালার্ম পাননি বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

তিনি জানান, ইউসিবিএল’র এক্সপার্ট টিম রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবেন। তারা ভল্টের তৃতীয় স্তর খোলার পর বোঝা যাবে সেখানে গচ্ছিত টাকা খোয়া গেছে কিনা।

এদিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সংগ্রহ করা মার্কেটের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় সংরক্ষিত ফুটেজে দেখা গেছে, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টা ৫১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে যুবক বয়সী দু’জন বেরিয়ে আসছেন ব্যাংকের ভেতর থেকে। প্রথমজন বেরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। দ্বিতীয়জন বের হয়ে তালা লাগান। রাত ৩টা ৫২ মিনিট ৭ সেকেন্ডে দু’জন বেরিয়ে যান।

ঘটনাস্থলে যাওয়া পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ভবনের মালিক আব্দুল হাইকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্তোষ সারাবাংলাকে জানান, আনুমানিক দুই সপ্তাহ আগে ভবন মালিকের কাছে একটি বিদেশি নম্বর থেকে ফোন আসে। বেলজিয়াম থেকে ফোন করেছেন জানিয়ে ওই ব্যক্তি ভবনের পাঁচতলায় একটি এনজিওর অফিস নেওয়ার প্রস্তাব দেন। মালিক সম্মত হওয়ার পর ২ ফেব্রুয়ারি দু’জন পাঁচতলায় ওঠেন। এর আগে ওই ফ্লোরটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ভাড়া দেওয়ার উপযোগী করা হয়। দু’জন সেখানে বিছানা পেতে থাকতেন এবং খাওয়া-দাওয়া করতেন। ব্যাংকের যে নিরাপত্তা কর্মীকে অজ্ঞানের মতো করা হয়, তাকে এনজিওতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বায়োডাটাও নেন তারা। শনিবার সকাল থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকে প্রবেশ করা ‍দু’জন তারাই বলে ধারণা সন্তোষের।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল হক বলেন, ‘এনজিও অফিস করার কথা বলে যে দুই জন পাঁচতলায় ওঠেছিলেন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমরা সন্দেহ করছি তারাই ব্যাংকে অপরাধ সংঘটন করেছে। দুর্বৃত্তরা প্রথমে ব্যাংকে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে, এটা একটা অপরাধ। ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করেছে সেটা আরেকটা অপরাধ। ভল্ট খোলার পর গচ্ছিত টাকা যদি লুটের প্রমাণ মেলে সেটা আরেকটা অপরাধ। এসব অপরাধের সঙ্গে ব্যাংকের ভেতরে-বাইরের কেউ জড়িত কিনা, ভবনের মালিকের কোনো ত্রুটি আছে কি না সবই আমরা তদন্ত করে দেখব।’

আপাতত ব্যাংকে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলেও জানিয়েছেন ডিসি ফারুকুল।

ইউসিবিএল ভল্ট ভাঙার চেষ্টা