চট্টগ্রামে বইমেলা শুরু সোমবার, থাকছে বই বিক্রিতে বিধি-নিষেধ
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অমর একুশের বইমেলা আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে নগরীর জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে। এবার বইমেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখা এমন কোনো বই বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই বইমেলা জাতির পিতাকে নিবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বইমেলার জন্য এবার প্রথমবারের মতো একটি নীতিমালা করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন- মেলায় স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, দেশবিরোধী এবং জঙ্গিবাদকে উদ্বুদ্ধ করে এরকম বই কেউ বিক্রি করতে পারবে না। সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া মেয়র জানান, সোমবার বিকেলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মেলা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
গতবারের চেয়ে মেলার পরিসর বেড়েছে উল্লেখ করে মেয়র জানান, ১ লাখ ২০ হাজার তিনশ বর্গফুট এলাকায় মোট ২০৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার ১১৮ এবং চট্টগ্রামের ৪০ প্রকাশকের স্টল থাকবে। গতবছর মেলার স্টল সংখ্যা ছিল ১১০টি, যারমধ্যে ঢাকার প্রকাশকদের স্টল ছিল ৫০টি।
মেলা পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব ও সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া জানিয়েছেন, নীতিমালা অনুসরণের বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একজনসহ মেলা পরিষদের কয়েকজনকে নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। তারা নিয়মিত মনিটর করবেন। কোনো অভিযোগ এলে সেটাও তারা দেখবেন। এরপর কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।
উল্লেখ্য নীতিমালার ৩৩ ধারায় বলা হয়- অশ্লীল, রুচিগর্হিত, জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি কটাক্ষমূলক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য যে কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা কোনো পত্রিকা বা অন্য কোনো দ্রব্য মেলায় বিক্রি, প্রচার ও প্রদর্শন করা যাবে না। পাশাপাশি বইমেলা পরিচালনা কমিটি ‘বিশেষ কারণে বা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে’ কোনো বই, ম্যাগাজিন, লিফলেট প্রচার, প্রদর্শন বা বিক্রি ‘বাঞ্চনীয়’ মনে না করলে অংশগ্রহণকারীরা তা প্রচার, প্রদর্শন বা বিক্রি করতে পারবে না বলেও নীতিমালার ওই ধারায় উল্লেখ করা হয়।
এবারের মেলায় অণ্বেষা, সন্দেশ, ইত্যাদি, চারুলিপি, তাম্রলিপি, আহমদ, অনুপম, অ্যাডর্ন, নালন্দা, ইউপিএল, প্রথমা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, অন্যপ্রকাশ, আগামী, গ্রন্থকুটির, রোদেলা, সময়, বলাকা, বাতিঘর, পাঞ্জেরিসহ বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা অংশ নেবে বলে জানান মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বইমেলায় তিনদিনের লেখক সম্মেলন হবে। এতে পশ্চিমবঙ্গের লেখকরাও যোগ দেবেন। মেলা উপলক্ষে সঙ্গীতানুষ্ঠান, রবীন্দ্র ও নজরুল উৎসব, বসন্ত বরণ উৎসব, কবিতা ও ছড়া উৎসব, তারুণ্য উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, বির্তক উৎসব, শিশু উৎসব, লেখক সম্মেলন ও পাঠক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সাহিত্য আড্ডা, সাহিত্য-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ, চিত্রাংক, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, লোক ও মরমী সংগীত, নাটক মঞ্চায়ন, জাদু প্রদর্শন ও নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গনে আয়োজক পরিষদের কক্ষ, হেলথ বুথ, ফায়ার সাভির্স, অর্ভ্যথনা কক্ষ, মিডিয়া বুথ, বিটিবি বুথ, এটিএম ব্যাংকের বুথ, সার্বক্ষণিক সেবা ব্যবস্থার জন্য সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস বুথ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে মেলা পরিষদের আহ্বায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, সৃজনশীল প্রকাশ পরিষদের সভাপতি ও মেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, যুগ্ম সচিব গবেষক জামাল উদ্দিনসহ প্রকাশকরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রথমবার সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় এই বইমেলার আয়োজন করে।