‘একুশ’ উদযাপনে ঢাবির নানা প্রস্তুতি
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:১৬
ঢাবি: অমর একুশে ফেব্রুয়ারির রণভূমি ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়। তার বুকে গৌরবের স্মৃতিস্তম্ভ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার বাঙালির ভাষা সংগ্রামের স্মারক ও চেতনার বাতিঘর। তাই প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে ভাষা শহিদদের প্রতি সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতি বছরের মতো এবছরও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২০’ যথাযোগ্য মর্যাদা এবং সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষে নানা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রস্তুতি সভা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে এবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অমর একুশে উদযাপনের আয়োজন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি জাতীয় দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় রীতি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমপক্ষে একমাস আগে থেকে একাডেমিক কাজের পাশাপাশি একুশে উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। উপাচার্য এ বিষয়টি সার্বিকভবে তদারকি করেন। কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন উপ-কমিটিতে কাজ ভাগ করে দিয়ে আমরা আয়োজন করে থাকি।’
শহীদ মিনার সাজানোর প্রস্তুতি নিয়ে প্রক্টর বলেন, ‘আমরা এখন থেকে শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজ করছি। রাস্তার দেয়ালে নতুন রঙ করা, শহীদ মিনার ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা, লাইটিং ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। একদিন আগে আমাদের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা রঙের তুলিতে সাজাবেন।’
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক আছে। সেখানে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কথা হবে। প্রতিবছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণসহ আশপাশ এলাকায় ডিএমপির নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কাজ করে। এবছর অধিকতর নিরাপত্তার লক্ষ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাস বা আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।’
এসময় তিনি অমর একুশের ভাব-গাম্ভীর্য এবং সৌন্দর্য রক্ষার্থে একুশে ফেব্রুয়ারির আগে শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠনের প্রোগ্রাম আয়োজন ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেয়ালে কোনো ছবি, পোস্টার ও ব্যানার না লাগানোর জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
একুশের ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবছর উদযাপন কার্যক্রম চলবে। তবে ঘোষণা মঞ্চ থেকে ঘোষণা কার্যক্রম দুপুর দুইটায় শেষ হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জানুয়ারি উদযাপন কমিটির প্রস্তুতি সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে সমন্বয়কারী, সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াকে যুগ্ম-সমন্বয়কারী এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে সদস্য-সচিব করে অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া সহায়ক হিসেবে ১৩টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ঘোষণা মঞ্চ ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি, সাজ-সজ্জা উপ-কমিটি, জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি, বৈদ্যুতিক আলো ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি, পরিবহন উপ-কমিটি, বাজেট উপ-কমিটি, আপ্যায়ন উপ-কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি, শৃঙ্খলা উপ-কমিটি, দাপ্তরিক কার্যাবলী ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা উপ-কমিটি এবং একুশের রাতে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ উপ-কমিটি।