চট্টগ্রামে একুশের বইমেলার পর্দা উঠল
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অমর একুশের বইমেলা শুরু হয়েছে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বইমেলার উদ্বোধন করেছেন।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শুরু হওয়া এই বইমেলা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সন্তানদের হাতে স্মার্টফোনের বদলে বই তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে একটি বিষয় পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। আজকাল অনেক অভিভাবকদের দেখা যায়, সন্তানের বয়স ১০-১২ বছর না পেরোতেই তার হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু অভিভাবকরা বোঝেন না যে একটি স্মার্টফোন দিয়ে অনেক কাজ করা যায়। ইতিবাচক কাজ যেমন আছে, নেতিবাচক কাজও আছে। অনৈতিক, অসামাজিক কাজও করতে পারে স্মার্টফোন দিয়ে।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্টফোনের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি আপনাদের নেতিবাচক দিকগুলোর কথাও মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্মার্টফোন নয়, সন্তানকে স্মার্ট করতে পারে একটি ভালো বই। বিল গেটসের মতো মানুষও তার সন্তানকে ১৬ বছর বয়স পেরোনোর পর ফোন দিয়েছিলেন।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘গত বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। যথেষ্ঠ সাড়া পড়েছিল। সবার কাছে সমাদৃত হয়েছিল। গতবার যে ভুলভ্রান্তি ছিল, এবার আমরা সেগুলো চিহ্নিত করেছি। চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, কবি, সাহিত্যিক,বুদ্ধিজীবিসহ সবাইকে নিয়ে সেই ভুল শুধরে এবারের বইমেলার আয়োজন করেছি। আশা করছি, এ বছরও বইমেলা পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে। পাঠকরা আসবেন এবং বই কিনবেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বইমেলায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান মেয়র।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু বক্তব্য রাখেন।
সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত এই বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতবারের চেয়ে এবার মেলার পরিসর বেড়েছে। এক লাখ ২০ হাজার তিনশ বর্গফুট এলাকায় মোট ২০৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ১১৮ ও চট্টগ্রামের ৪০ প্রকাশকের স্টল আছে। গতবছর মেলার স্টল সংখ্যা ছিল ১১০টি, যার মধ্যে ঢাকার প্রকাশকদের স্টল ছিল ৫০টি। এবারের মেলায় অন্বেষা, সন্দেশ, ইত্যাদি, চারুলিপি, তাম্রলিপি, আহমদ, অনুপম, অ্যাডর্ন, নালন্দা, ইউপিএল, প্রথমা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, অন্য প্রকাশ, আগামী, গ্রন্থকুটির, রোদেলা, সময়, বলাকা, বাতিঘর, পাঞ্জেরিসহ বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা অংশ নিচ্ছে।
বইমেলার জন্য এবার প্রথমবারের মতো একটি নীতিমালা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মেলায় অশ্লীল ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টিকারী, স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, দেশবিরোধী এবং জঙ্গিবাদকে উদ্বুদ্ধ করে— এরকম বই কেউ বিক্রি করতে পারবে না। নীতিমালা অনুসরণের বিষয়টি সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিটরিং করবেন।
এবারের বইমেলায় তিন দিনের লেখক সম্মেলন হবে। এতে পশ্চিমবঙ্গের লেখকরাও যোগ দেবেন। মেলা উপলক্ষে সংগীতানুষ্ঠান, রবীন্দ্র ও নজরুল উৎসব, বসন্ত বরণ উৎসব, কবিতা ও ছড়া উৎসব, তারুণ্য উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, বির্তক উৎসব, শিশু উৎসব, লেখক সম্মেলন ও পাঠক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা, সাহিত্য-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ, চিত্রাঙ্কন, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, লোক ও মরমী সংগীত, নাটক মঞ্চায়ন, জাদু প্রদর্শন ও নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজক পরিষদের কক্ষ, হেলথ বুথ, ফায়ার সার্ভিস, অভ্যর্থনা কক্ষ, মিডিয়া বুথ, বিটিবি বুথ, এটিএম ব্যাংকের বুথ, সার্বক্ষণিক সেবা ব্যবস্থার জন্য সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস বুথ আছে।
আ জ ম নাছির উদ্দীন একুশের বইমেলা চট্টগ্রাম বইমেলা তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বইমেলা