ঝুঁকি আছে, তবে আতঙ্ক নেই: আইইডিসিআর
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:০৯
ঢাকা: চীনে মহামারি আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি) ঝুঁকি থাকলেও বাংলাদেশে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে চীন ফেরত শিক্ষার্থী আগের দিনের চেয়ে সুস্থ আছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আইইডিসিআর’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সরকারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘২১ জানুয়ারি থেকে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৬ হাজার ৫২২ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময়ে ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নেই, এটি আমরা বলতে পারি।’
চীন ফেরত আরেকজন বাংলাদেশি নাগরিককে ঢাকায় স্থানান্তর করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সন্দেহে ওই নাগরিককে হাসপাতালে ভর্তি করলেও তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে।’
উহান থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘তারা ১ ফেব্রুয়ারি এসেছেন। ১৪ দিনের ‘ইনকিউবিশন পিরিয়ড’ হিসেবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপরও যদি তারা কোনো অসুবিধা বোধ করেন, তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।’
সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশি নাগরিকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে একজন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বাংলাদেশের হাইকমিশন জানিয়েছে। সেখানে ওই শ্রমিক দেড় বছর ধরে কাজ করছেন। অন্য অসুস্থতার কারণে তিনি হাসপাতালে যান। সেখানে যাওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেহেতু বাইরের দেশে রোগীর গোপনীয়তা খুব কঠিনভাবে মেনে চলা হয়, তাই তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সিঙ্গাপুর নয়, যেসব দেশে লোকাল ট্রান্সমিশন রয়েছে তাদের সঙ্গেও আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সিঙ্গাপুরে প্রতিদিন আমাদের অনেক ফ্লাইট যায়। সেদিক থেকে আমাদের ঝুঁকি রয়েছে বলেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’
গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস থাকতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ঘরের পোষা প্রাণী নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ফ্লোরা সকল হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত কমিটিকে আরো সক্রিয় করার জন্য আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি জনগণকে ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ছাড়া সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের সকল বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বিশ্বে ও বাংলাদেশে ২০১৯ এনকভ পরিস্থিতি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।