শেয়ার বিক্রি ও পরিবহন ইজারার বিধান রেখে বিআরটিসি আইন পাস
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:৪৫
সংসদ ভবন থেকে: জনগণের কাছে ৪৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি এবং বাস বা ট্রাক দীর্ঘ মেয়াদে ইজারায় পরিচালনার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) আইন-২০২০’ সংসদে পাস হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশেন মঙ্গলবারের (১১ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে বিলটি সংসদের স্থিরকৃত আকারে কন্ঠভোটে পাস হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১’ রহিত করে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন আইন-২০২০’ বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। এর আগে বিলের ওপর আনীত জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমানের কয়েকটি সংশোধনী নেওয়া হয়। তবে জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও অপর সংশোধনীর প্রস্তাব কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলটির ওপর বিভিন্ন প্রস্তাব আনেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
বিলটি পাসের যৌক্তিতা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিসি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবহন সেবা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। দেশের ৪২৮টি রুট ও ৫টি আন্তর্জাতিক রুটে বিআরটিসির পরিবহন চলছে। নতুন আরও দুটি আন্তর্জাতিক রুট শিগগিরই চালু হবে। বর্তমানে বিআরটিসিতে ১ হাজার ৮৩০টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩২টি সচল রয়েছে। ইন্ডিয়ার লাইন অব ক্রেডিটে ১ হাজার ২৮টি নতুন বাস ও পাঁচশ’ ট্রাক কেনা হয়েছে।’
বিলে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেনের জন্য এক হাজার কোটি টাকা মূলধন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূলধন একশ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত হবে। এর ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকবে সরকরের মালিকানায়। অবশিষ্ট্রের মধ্যে ৪৫ শতাংশ শেয়ার জনগণের কাছে বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া বিলে বিআরটিসি বাস বা ট্রাক দীর্ঘ মেয়াদে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ইজারায় পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের স্বাধীনতা উত্তর ক্ষতিগ্রস্থ দ্যা ব্যাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় পুনগর্ঠিত হয়ে আজ এ পর্যায়ে এসেছে। সেক্ষেত্রে উক্ত অর্ডিন্যান্সের অধীনে করপোরেশনের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে ‘রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১’ রহিত করে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন নামে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
আগের আইনের ৩৫টি ধারা যুগোপযোগী করে ২৯ ধারা সমন্বয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হয়। বিলে সরকারের পূর্বানোমদন সাপেক্ষে এক বা একাধিক কোম্পানি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে বা বিদেশে করপোরেশনের অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মেরামত কারখানা বা ডিপো স্থাপন করার বিধান রাখা হয়েছে। বিলে হরতাল, পরিবহন ধর্মঘট, জরুরি অবস্থা, প্রাকৃতিক দুযোর্গ, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে, বিশ্ব ইজতেমা, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং অনুরূপ পরিস্থিতিতে বিশেষ পরিবহন সেবা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে।
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা লাভজনক নয় এমন বাস বা ট্রাক দীর্ঘ মেয়াদে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ইজারায় পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। এছাড়া বিলে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন পরিচালনা পরিষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকার, মন্ত্রিপরিষদ, অর্থ, সড়ক পরিহবন ও মহাসড়ক এবং জননিরাপত্তা বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, ডিটিসিএ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, শেয়ার হোল্ডারদের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক বিভাগের প্রতিনিধি থাকবেন।