করোনাভাইরাস: ৬ দিনেও কোনো অভিভাবক আসেননি আইইডিসিআরে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৪৪
ঢাকা: ১ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে ফিরে আসেন ৩১২ বাংলাদেশি। করোনাভাইরাস ঘিরে সতর্কতার কারণে তাদের আশকোনার হজ ক্যাম্পে কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয়। ওই সময় পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ না থাকলেও তারা ভিড় জমিয়েছিলেন সেখানে। তবে পাঁচ দিন পর উহান ফেরত বাংলাদেশিদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানার সুযোগ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। জানানো হয়, অভিভাবকরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন। তবে সে কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো কোনো স্বজনই যোগাযোগ করেননি আইইডিসিআরে!
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে আইইডিসিআর। তাতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিদের স্বজনরা আসতে পারবেন আইইডিসিআরে। তাদের যেকোনো জিজ্ঞাসা ও প্রশ্নের জবাব দেবেন তারা।
এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে সবশেষ আজ ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিনে কোনো অভিভাবক বা স্বজনই যোগাযোগ করেননি আইইডিসিআরের সঙ্গে। অথচ এই সময়ে প্রতিদিনই ৩১২ বাংলাদেশির কারও না কারও স্বজন উপস্থিত হয়েছেন হজ ক্যাম্পের কোয়ারেনটাইন ইউনিটে।
আইইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, যদি কোনো অভিযোগ নিয়ে একজন অভিভাবকও আসেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আশকোনা ক্যাম্পের পুরো পরিস্থিতি আমরা জানি। কিন্তু এখানে কেউ আসেননি।
আইইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এরই মধ্যে ক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে থাকা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছি। যারা ক্যাম্পে থাকেন, তাদের সবার সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ হয়। আমি সবার সমস্যার কথা শুনেছি, চেষ্টা করেছি আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও সবার সমস্যার সমাধান করতে। তবে একটা কথা বলব, আমরা যেমন আমাদের কাজ করে যাচ্ছি, ঠিক একইভাবে পর্যবেক্ষণে থাকা সবাইকেও কিন্তু নিজেদের কথা বাদ দিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মনে রাখতে হবেন। আমার মনে হয়, সেটা তারা এখন বুঝেও গেছেন।
কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুতেই করোনাভাইরাস যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তাতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা। ওই অবস্থায় যখন উহান ফেরত সবাইকে কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয়, সেখানকার ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তবে কোয়ারেনটাইন ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি শুনে আর সব অভিযোগ দূর হয়ে গেছে তাদের। এসব নিয়ে তাদের মনে তেমন প্রশ্নও নেই। সে কারণেই আইইডিসিআর সুযোগ দিলেও সেখানে যাননি তারা।
কোয়ারেনটাইন ইউনিটে থাকা একজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় সারাবাংলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিকে আসলে আমরা খানিকটা আতঙ্কিত ছিলাম। একে তো করোনাভাইরাসের একদম কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলাম, তারওপর আমাদের এমন একটি পরিবেশে রাখা হচ্ছিল, যেটি প্রত্যাশিত ছিল না। আবার থাকার জায়গাটিতে অনেক মানুষকে একসঙ্গে থাকতে হচ্ছিল। সব মিলিয়ে আমরা খুব শঙ্কিত ছিলাম। আমাদের সবার পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও একই অনুভূতি কাজ করেছে তখন।
উহান ফেরত ওই তরুণ আরও বলেন, তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার আমার পরিবারের সদস্যরা থাকেন ঢাকার বাইরে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারাও এখনকার পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। আর তাদের ঢাকায় আসতেও নিষেধ করেছি। তবে যাদের পরিবার ঢাকা বা আশপাশের এলাকায় থাকে, তাদের অনেকেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।