বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা, বের করতে তদন্ত কমিশনের দাবি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৫২
সংসদ ভবন থেকে: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে কারা ভূমিকা রেখেছিল, তাদের চিহ্নিত করতে বিশেষ তদন্ত কমিশন গঠনে দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। জয়বাংলার পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ চালু করেছে। এর মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থমকে দিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশেনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন পরিচালিত হয়।
অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা জনগণের ট্যাক্সের টাকার অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারকে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান। তারা বলেন, চলমান অভিযান অব্যাহত রাখলে অসৎ ব্যক্তি ও কালো টাকার মালিকরা রেহাই পাবে না।
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সরকারি দলের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ, জয়া সেনগুপ্তা, মোছলেম উদ্দিন আহমদ, শাহে আলম, কাজিম উদ্দিন ফিরোজ, জুয়েল আড়েংসহ অন্যরা।
বক্তব্যে শেখ সেলিম বলেন, মুজিববর্ষে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের নৃশংসতম ও জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকৃত চেহারা উম্মোচন করতে হবে। জীবিত অথবা বেঁচে থাকা যেই-ই হোক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী কারা— তা একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের অনেক কষ্ট করে বিচার করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু এ খুনের সঙ্গে অনেকেই জড়িত ছিল। তাদের পরিচয় বের করে আনতে হবে।
বক্তব্যে তখনকার সেনাপ্রধান শফিউল্লার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ সেলিম। জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মুশতাক ষড়যন্ত্রকারী জিয়াকে সেনাপ্রধান করে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই সময়ের সিনিয়র সেনা অফিসারের পাশাপাশি অনেক সিভিল সার্ভিসের লোকও জড়িত ছিল। যে খাদ্য সচিব ষড়যন্ত্র করে দেশে দুর্ভিক্ষ তৈরি করে, তাকে জিয়া পদোন্নতি দেয়। দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পরাজিত শক্তির দোসর অনেক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরাও জড়িত ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ শুরু করেন, তখন থেকেই বিপ্লবীদের সঙ্গে অতি বিপ্লবীরাও উচ্চাভিলাষিতার কারণে দেশে অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা শুরু করে। অতি বিপ্লবীরা স্বাধীনতার প্রতিবিপ্লবী সিরাজ শিকদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করার চেষ্টা করে। দেশ পুনর্গঠনে বাধা দেয়। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনী গঠন করা হয়। আট জন এমপিকে হত্যা করা হয়, ব্যাংক লুট করা হয়, পাটের গুদামে আগুন দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তবে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। চলমান অভিযান অব্যাহত রাখলে অসৎ ব্যক্তি ও কালো টাকার মালিকরা রেহাই পাবে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর নীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়— এই ব্যালেন্স কূটনীতি নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মুজিববর্ষ সারাবিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজ সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, নিজেদের দেশে উৎপাদনের ঘাটতি থাকায় হঠাৎ করেই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে সংকট দেখা দেয়। আমরা দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এবার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এ বছর অন্তত ২০ ভাগ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারব।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অসীম কুমার উকিল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি সারাবিশ্বে সন্ত্রাসবাদ দমনের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। অতীত সরকার প্রধানরা ক্ষমতায় থেকে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন, তাদের দুর্নীতি সারাবিশ্বে প্রমাণিত। চার চারবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে সামান্যতম কোনো দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি, বরং তার অক্লান্ত কর্মযজ্ঞের কারণে দেশের কোনো গ্রামে কবি আর কোনো খড়ের ঘর খুঁজে পান না।
পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুলিশ বাহিনী একটি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা। নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নে পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। তাহলেই পুলিশ বাহিনী জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে। জনগণের পুলিশ হবে।