Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে তীর সংরক্ষণ কাজ


১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:৫৪

ভোলা: ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার ভাঙনকবলিত মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লক ও বেড়ি বাঁধের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তার পাশিই নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে প্রভাবশালী একটি মহল। ফলে নদীর ভাঙন ঠেকাতে সরকারের সাড়ে চারশ কোটি টাকার সিসি ব্লক ও বেড়ি বাঁধের পড়েছে কাজ হুমকির মুখে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর থেকে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছ। গত তিন বছর ধরে এ এলাকায় প্রভাবশালী একটি মহল বালু তুলছে। এলাকার লোকজন তাদের নিষেধ করলেও তারা তা মানছে না। এমনকি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কোস্টগার্ড একাধিকবার এ বালু উত্তোলনে বাধা দিলেও তারা কয়েকদিন তা বন্ধ রাখে। পরে ফের শুরু করে বালু তোলা। আর এ বালু উত্তোলন হচ্ছে ছালেম মাতাব্বর ওরফে বালু ছালাম ও মো. সবুজ ওরফে বালু সবুজের নির্দেশে। এই দুজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর (পাউবো) তথ্যমতে, তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমহনী থেকে কেয়ামুল্যাহ পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার মেঘনার তীর ও স্লপ (বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢাল) সংরক্ষণ কাজ করা হচ্ছে। এখানে প্রায় ৪০ লাখ সিসি ব্লক ফেলা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৯ কোটি টাকা। কাজটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুরু হয়েছে, যা এখনও চলমান।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট মাছঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ভাঙন কবলিত এলাকায় বেড়ি বাঁধ ও ব্লক তৈরির কাজ চলছে। এরই পাশে বন বিভাগের শশীগঞ্জ বিট অফিস থেকে শুরু করে স্লুইজগেট পর্যন্ত একাধিক ড্রেজার বসিয়ে পাইপ দিয়ে মেঘনা নদী থেকে বালু তুলে পুকুর, বিল, কৃষিজমি, ঘর-বাড়ির ভিটা ভরাট করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো যায়গায় বালু জমা করে রাখা হচ্ছে বিক্রি করার জন্য।

বিজ্ঞাপন

তজুমদ্দিনবাসীরা জানান, পাউবোর তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিকে ভাঙনের মুখ থেকে বালু তোলা হয়েছে। আরেকদিকে ব্লক ফেলে তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে। এতে করে ভাঙন বন্ধ না হয়ে উল্টো বাড়ছে।

নদী ভাঙনের শিকার একাধিক এলাকাবাসী বলেন, ভাঙন এলাকার পাশের মেঘনা থেকে মো. ছালেম মাতাব্বর নামের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ২০১৬ সাল থেকে বালু তুলছেন। এতে করে মেঘনার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। প্রতিদিন মেঘনা থেকে অপরিকল্পিত ২০-২৫টি কার্গো জাহাজ দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

স্লুইজগেট মাছঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে এ উপজেলায় নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। বর্ষায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তজুমদ্দিনবাসী বর্ষার জোয়ারে প্লাবিত হয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে; এখন শীতেও নদী ভাঙছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ছালেম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাকে নদীর তীর থেকে বালু তুলতে নিষেধ করেছি। নদীর মাঝে যে ডুবোচর আছে, সেখান থেকে কাটতে বলেছি। কারণ ডুবোচরের কারণে তীর ভাঙছে।’

এ বিষয়ে ছালেম মাতব্বরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রথমে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অনেকবার চেষ্টার পর পাওয়া গেলেও সে বালু তোলা নিয়ে কথা বলতে অপারগতা দেখান। তবে ছালেম মাতাব্বরের ছেলে নুরে আলম জানান, তারা মেঘনা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন না, কার্গো থেকে মোটা দানার বালু তুলছেন।

সবুজও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মেঘনা থেকে চিকন দানার ভিটি বালু তোলা হয়। আমি মুন্সীগঞ্জে টোক (বড় দানা) বালুর ব্যবসা করি।’

তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি তজুমদ্দিনে আসার পরে বালু তোলা বন্ধ করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য কিছু বালু উত্তোলন করছিল। সেই বালু তোলার জন্যই পাইপ টানা ছিল। কাজ শেষ হওয়ার পর ফের যদি বালু তোলা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভোলা বন্দরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চরফ্যাশন-লালমোহন-মনপুরা-তজুমদ্দিন-বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান-ভোলা-ঢাকা নৌপথে মেঘনা নদীতে ১৫টির মতো লঞ্চঘাট রয়েছে। মেঘনায় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মেঘনার তীরে সবকটি লঞ্চঘাট বারবার বন্ধ হচ্ছে।’

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো-২) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের তীর সংরক্ষণ কাজে কোনো ভিটি বালুর (চিকন) দরকার নেই। মেঘনা নদী এমনিতেই ভাঙনপ্রবণ। ভাঙনের আশপাশ দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তা আরও বাড়ে।’

বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা খন্দকার বলেন, ‘বালু ব্যাবসায়ীরা যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলছে। এ কারণে নদীর ভাঙন বাড়ছে। বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগ নদীর ডুবোচর কেটে সমান (লেবেল) করে। এতে নদীর নাব্যতা ফিরে আসে। আর বালু উত্তোলণকারীরা গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলণ করে। গর্ত করার কারণে চারদিক থেকে ভেঙে আবার গর্ত ভরাট হয়। এতে বিপর্যয় দেখা দেয়।’

এদিকে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে মেঘনার ভাঙন বৃদ্ধি ছাড়াও অনেক ক্ষতি করছে। তাছাড়া ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মেঘনায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার দায়ে দুজনকে দুই বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে ‘

অবৈধভাবে তমুদ্দিন বালু উত্তোলন ভোলা মেঘনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর