প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে আমরা এগিয়ে থাকতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:২৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান যুগটাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা সব সময় এগিয়ে থাকতে চাই, পিছিয়ে নয়।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রান্তে শতভাগ বিদ্যুাতায়িত ৭টি জেলা, ফেনীতে ১টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং ১৮টি জেলার ২৩টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুাতায়ন উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পাশাপাশি রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে আদর্শ নিয়ে, যে চিন্তা নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই চিন্তা চেতনা থেকে বাংলাদেশ সরে এসেছিল। কারণ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং হত্যাকারী-ষড়যন্ত্রকারী পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশকে তারা এগুতে দেয়নি। ২১বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। সরকারে আসার পর আমাদের প্রচেষ্টা ছিল, যে চিন্তা-চেতনা নিয়ে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনেছিলেন তা বাস্তবায়ন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি।’
এ সময় তিনি সরকার পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসী এবং ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। প্রযুক্তি সেবার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে। সেকথা চিন্তা করেই বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছিলাম। প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষকে অন্তত সচেতন করতে পেরেছিলাম।’
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে এবং বর্তমান যুগটাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন? এটা কখনই হতে পারে না।’
ভোটের রাজনীতিতে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাবের দিকটির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজশাহী আসলে বলতে গেলে প্রকৃতঅর্থে অবহেলিত জায়গাই রয়ে গেছে। যদিও সবসময় আমরা খুব বেশি একটা ভোট পেতাম না। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন থেকে রাজশাহীর লোক সুবিধা পাচ্ছে। এটাই হলো বাস্তবতা। যতটুকু উন্নতি আজ হয়েছে, সবই কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহী যাতে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পায়নে পিছিয়ে না থাকে সেজন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, ‘দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি, আমরা ১ হাজার ৬শ মেগাওয়াট থেকে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে গিয়েছিলাম; সাতবছর পরে ক্ষমতায় এসে দেখি সেখান থেকে আরও কমে গেছে। সেই জায়গা থেকে আমরা যাত্রা শুরু করলাম, আজকে আমরা প্রায় ২৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি। ক্যাপটিভ জেনারেশন ধরলে বোধহয় আরও বাড়বে। এখন ৯৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে এমনভাবে শিক্ষিত করতে চাই, যেন প্রতিযোগিতাময় এই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সেজন্য প্রযুক্তি শিক্ষাটা একান্তভাবে দরকার। তাই আইসিটি নির্ভর একটা জাতিগোষ্ঠী গড়ে তোলার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন দেখেছি, একটা মোবাইল ফোনের দাম ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফোন করলে প্রতি মিনিট ছিল দশ টাকা, ধরলেও দশ টাকা। এখন তো খুব অল্প টাকাতেই ব্যবহার করা যায়। আর আমরা বাঙালিরা কথা একটু বেশি বলতেই পছন্দ করি; বোধহয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফোনের ব্যবহার বাংলাদেশেই হয়। হিসাব করলে দেখা যায়, আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৩ কোটি সিম ব্যবহার হয়ে থাকে। এখানে ছোট শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা আছে। হিসাব করলে দেখা যায় যে, সকলেই দুইটা-তিনটা করে ফোন ব্যবহার করছে। এবং একটু সুযোগ পেলেই আমরা কথা বলছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টি জেলায় এখন শতভাগ বিদ্যুৎ হয়ে গেল। আর উপজেলায় আমরা প্রায় ৪১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা দিতে পারলাম। আর বাকি যেগুলো আছে, এই মুজিববর্ষেই আমরা বাংলাদেশের সকল ঘরে আলো জ্বালাব ইনশাল্লাহ। সেই বিশেষ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এদিন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা, ফেনী, গোলাপগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট ও মেহেরপুর এই সাতটি জেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংযুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গণভববন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।