রোহিঙ্গাদের বাড়তি অর্থ নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবছে সরকার
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:১৩
ঢাকা: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে (টেকনাফ ও উখিয়া) আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের দ্বারা সৃষ্ট অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচারের ঘটনা থামানোই যাচ্ছে না। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আশ্রয় শিবিরগুলোর ভেতরে ও বাইরে এসব ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের হাতের বাড়তি অর্থ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের ভাসানচরে স্থানান্তরসহ একাধিক বিকল্প পদক্ষেপের কথা ভাবছে সরকার।
গত কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ১১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার এলাকায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৫ রোহিঙ্গার মৃতদেহ ও ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ওই ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছে অর্ধশতাধিক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতে পাচার হওয়ার আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে দুই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে পুলিশ। গত ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আব্দুল নাসের (৩০) নামের এক রোহিঙ্গা মাদক কারবারির মৃত্যু হয়। ২৭ জানুয়ারি ঢাকার আফতাবনগরের বি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাসায় র্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে ১৩ রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করে। ২৪ জনুয়ারি ভোররাত ৪টার দিকে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে একজন রোহিঙ্গা ব্যক্তি নিহত হন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা ও একটি দেশীয় এলজি বন্দুক উদ্ধার করা হয়।
‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কী করছে?’- জানতে চাইলে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমের কয়েকজন কর্মীকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যে পাচারের শিকার হচ্ছে বা হবে- এই ঝুঁকিটা সব সময়ই ছিল। প্রত্যাবাসন যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, এই ঝুঁকিগুলোও থাকবে। আমরা প্রথম থেকেই বলেছি যে, রোহিঙ্গাদের হাতে যেন বাড়তি কোনো অর্থ না থাকে। সেটা এখন আমরা নিয়ন্ত্রণ (ট্যাকল) করার কথা ভাবছি। কেননা রোহিঙ্গাদের হাতে যখন বাড়তি অর্থ থাকবে, তখনই তারা পাচারকারীদের শিকার হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, শুধু বাংলাদেশ থেকেই নয়, রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকেও পাচারের শিকার হয়েছে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘পাচারের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন। কেননা রোহাঙ্গাদের মধ্যেই পাচারকারী রয়েছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে আরও তৎপর হবে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, রোহিঙ্গা সঙ্কট যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, এসব ঝুঁকি তত বাড়বে। কেননা এখানে পাচারের সঙ্গে মাদকেরও একটা সংশ্লিষ্টটা রয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গা তরুণ বা নারীরাও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে মানব ও মাদকপাচারসহ সবগুলো ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়টি এসেছে। এই বেড়া রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয় বরং তাদের নিরাপত্তার জন্যই করা হচ্ছে। পাশাপাশি তারা যেন গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেটাও একটা বিষয়। তবে কাঁটাতারের বেড়া এখনও সব জায়গাতে দেওয়া হয়নি, কিছু জটিলতা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। আর সে কারণেই ভাসানচরে আমাদের বিকল্প যে ভাবনা রয়েছে সেটা কাজে লাগাতে হবে। ভাসানচরে রোহিঙ্গারা ভালো থাকবে। এতে ঝুঁকিগুলোও কমে আসবে। ভাসানচর প্রস্তুত হচ্ছে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে পরিদর্শনে যাবেন। ওইদিন আমরা সর্বশেষ অগ্রগতি সরেজিমন দেখব। এবং আরও কী কী বিষয়ের উন্নতি করতে হবে, তা জানব।’