Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতির স্বকীয়তা ধরে রেখে সংস্কৃতি চর্চার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:২২

ঢাকা: সংস্কৃতির বিকাশকে একটা জাতির বৈশিষ্ট্য অভিহিত করে সেই বৈশিষ্ট্য ধরে রেখে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে জাতির স্বকীয়তা প্রচারের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া তিনি বলেন, ‘একটা দেশকে যখন আমরা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তখনো কিন্তু এই সংস্কৃতি চর্চাটা একান্তভাবে জরুরি। অনেকে আমরা বক্ততা দিয়ে যা না বলতে পারব, মানুষের কাছে যতটা পৌঁছাতে না পারব, তার থেকে অনেক বেশি পৌঁছাতে পারবেন সংস্কৃতি কর্মীরা।’

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের উদ্যোগে মাসব্যাপী নাট্যৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

উদ্বোধন পর্ব শেষ করে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের শিল্পকলা একাডেমিতে সংযুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন। তার আগে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কয়েকটি জেলায় সংযুক্ত হয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন।

ভাষা শহিদদের অবদানের কথা স্মরণ করে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। একটি জাতি তখনই গড়ে উঠতে পারে। যখন তার সংস্কৃতির চর্চা করতে পারে। শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের একটা উন্নত অবস্থান সৃষ্টি করতে পারে তখনই একটা জাতি কিন্তু নিজেকে সারাবিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারে।’

২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সংস্কৃতি চর্চাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে আবারও কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন প্রেক্ষপটে সংস্কৃতি চর্চার অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, আমি-আমরা রাজনীতি করি, একটা বক্তৃতা দেই। বক্তৃতা দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাই, এটা ঠিক। কিন্তু একটা গানের মধ্য দিয়ে বা কবিতার মধ্য দিয়ে বা একটা নাটকের মধ্য দিয়ে অনেক না বলা কথা বলে যাওয়া যায় এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। মানুষের অনেক দাবি-দাওয়া তুলে ধরা যায়।’

‘আমরা যখন আন্দোলন করেছি। তখন আমরা দেখেছি, আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে অর্থাৎ ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, অথবা সেই পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে আইয়ুব খানের মার্শাল ল’—যখনই সুযোগ হয়েছে তখনই নাটক, সাহিত্য ও কবিতার মধ্য দিয়েই কিন্তু এই মিলিটারি ডিটেকটরের বিরুদ্ধে কথা বলা বা বার্তাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, এটা কিন্তু সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই পৌঁছে গেছে’—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

‘বর্তমান সময়ে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ একটা পরিবার, একটা সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের শিশু-কিশোর থেকে যুব সমাজ তাদেরকে যদি আমরা সঠিক পথে নিয়ে আসতে চাই, তাহলে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন। এসব দিকে তাদেরকে যত বেশি আমরা সম্পৃক্ত করতে পারব ততবেশি তাদেরকে একটা সুপথে আনতে পারব’—বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া মুজিববর্ষ সামনে রেখে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মাসব্যাপী নাট্য উৎসবের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেকে আমরা বক্ততা দিয়ে যা বলতে না পারব, মানুষের কাছে যতটা না পৌঁছাতে পারব, তার থেকে অনেক বেশি পৌঁছাতে পারবেন আপনারা; এই সংস্কৃতি কর্মীরা।’

লুকিয়ে গিয়ে মঞ্চনাটক দেখার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নুরুল দীনের সারাজীবন; এই নাটকটা যখন মহিলা সমিতির নাট্যমঞ্চে মঞ্চায়ন হতো, আমি কয়েকবার সেখানে কাউকে না বলে নিজে টিকিটি কিনে চুপচাপ বসেছি, যখন নাটক শুরু হবে তখনই সেখানে চলে গেছি। নাটকটা অন্তত আমি দুই-তিনবার দেখেছি। আর যতবার দেখেছি, আমি চোখের পানি রাখতে পারিনি।’

‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর নির্মলেন্দু গুণের যে কবিতাটা, এই কবিতাটাই যেন শুধু ৭ই মার্চের ভাষণের কথা না, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছিল। তখনকার সময়ে যখন কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। তখন আমাদের কবি, শিল্পী-সাহিত্যিকরাই এসেছেন এগিয়ে। তারাই কিন্তু এই কবিতার মধ্য দিয়ে একদিকে প্রতিবাদের ভাষা, অপরদিকে জাতির পিতার অবদানের কথা তুলে ধরেছিলেন’—বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য এত কবিতা, এত গান, এত লেখা কিন্তু বের হয়নি। যতটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্য করা হয়েছে’—বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘কারণ ২১টা বছর তার নামটা এই দেশে নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই না, ভাষা আন্দোলনে তার যে অবদান, ইতিহাস থেকে সেটাও মুছে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার স্বাধীনতা সংগ্রামের অবদানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু লেখনীর মধ্য দিয়ে সেগুলি আবার উদ্ভাসিত হয়েছে’ বলেও জানান তিনি।

সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে ইতিহাস ও বাঙালি জাতি হিসাবে নিজেদের যে আত্মমর্যাদা রয়েছে, সেই মর্যাদা সংষ্কৃতি চর্চার মধ্যে ধরে রাখার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে সারাদেশে শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তোলা, শিল্প সংস্কৃতি চর্চার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতি সংস্কৃতি স্বকীয়তা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর