Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে’


১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:২৫

ঢাকা: সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে চীনের অর্থনীতির ওপর যেকোনো আঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনীতির ওপর এর প্রভাবও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের অবদান ১৬ শতাংশ। তাই চীনের অর্থনীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়লে তা সারাবিশ্বের অর্থনীতিতেই প্রভাব ফেলে। তবে ২০০৩ সালেও চীনে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা খুব দ্রুত সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। একইভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদী। আবার সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত কাটিয়ে উঠে চীন অর্থনীতিতে বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। আমরা আশা করি, এই ভাইরাস মোকাবিলা করেও তারা একইভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে।

বিসিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, করোনাভাইরাসে চীনের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হলেও এটি চীনের একক সমস্যা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জরি করেছে। ফলে সমস্যাটি বৈশ্বিক। তাই এই ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে সারাবিশ্বের মানুষকে রক্ষা করতে হলে সব দেশকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীন সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে গাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে এই ভাইরাস মোকাবিলায় শুরু থেকেই চীন সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তারা এক হাজার বেডের পূর্ণাঙ্গ একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। এর মাধ্যমে চীন তার সক্ষমতারও প্রমাণ দিয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের এই সভাপতি বলেন, গত দুই মাসে আমদানি-রফতানি কিছুটা কমেছে। তবে পরবর্তী সময়ে আরও বেশি পণ্য আমদানি-রফতানির মাধ্যমে এখনকার ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে গাজী গোলাম মতুর্জা বলেন, চীন একটি বড় দেশ। এই দেশের একটি প্রদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। তবে চীনের আরও অনেক প্রদেশ আছে। সেসব প্রদেশের সঙ্গেও আমাদের আলাদা আলাদাভাবে আমদানি বাণিজ্য রয়েছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে হুবেই প্রদেশ থেকে আমদানি কিছুটা কমলেও অন্য প্রদেশগুলো থেকে আমদানি চলছে। একটি প্রদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের কারণে সার্বিকভাবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য খুব একটা বাধাগ্রস্ত হবে না।

সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কিছুটা কমেছে। তবে এটা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে না। আমরা আশা করি, চীনও খুব দ্রুতই এই প্রভাব কাটিয়ে উঠবে। চীন সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক এবং তারা দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।

লি জিমিং আরও বলেন, এর আগে সার্স ভাইরাসকে সফলভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনাভাইরাসকেও মোকাবিলা করতে এরই মধ্যে চীন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও সক্ষমতা নিয়ে চীন এই ভাইরাসকে বৈজ্ঞানিকভাবেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চীন এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবে বলে আমরা আশাবাদী। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজে এটি তদারকি করছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। আমাদের এই দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের সরকার, জনগণ ও গণমাধ্যম চীনের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। আমরা সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে কর্মরতদের ১০ শতাংশ প্রকৌশলী ও শ্রমিক বর্তমানে চীনে ছুটিতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। এই ১০ শতাংশ জনবলের কারণে মেগা প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

পরে চীনের করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের পক্ষ থেকে চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে মাস্ক তুলে দেন চেম্বার সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা। এসময় তিনি জানান, এর আগেও চেম্বারের পক্ষ থেকে চীনে মাস্ক পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরও মাস্ক পাঠানো হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে চীনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর লিউ ঝিহুয়া, বিসিসিসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান মৃধা বেনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মুধাসহ বাংলাদেশে চীন দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গাজী গোলাম মর্তুজা বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বিসিসিসিআই লি জিমিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর