করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুত ২০০ বেড: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:০৭
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কেউ আক্রান্ত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি আছে। এই ভাইরাস মোকাবিলায় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২০০ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত হেলথ ক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তাই করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। তবে বাংলাদেশে কোনো মানুষের করোনাভাইরাস ধরা না পড়লেও এটি প্রতিরোধে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যেই তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে ২০ বেডের একটি আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আরও প্রায় ২০০ বেড রাখা হয়েছে একই হাসপাতালে। পুরো কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যদি আসে তাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকল হাসপাতালেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ডেডিকেট করা হয়েছে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালকে। আমরা আশা করি, এই রোগ আমাদের দেশে আসবে না। তাও চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি কারও শরীরে এ ভাইরাস দেখা দেয়, তবে সে সব হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি দেশের বেসরকারি হাসপাতালে এ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনামূলক লিফলেট, বুকলেট পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘চীন থেকে ফিরিয়ে আনা ৩১২ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে তাদের সবাইকেই বাড়িতে যেতে দেওয়া হবে।’
সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের কাজে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া কর্মীদের দিনভর নানাকাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এতে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। এ কারণে ডিআরইউ সেন্টারে প্রয়োজনীয় জায়গা পেলে একটি সার্বক্ষণিক চিকিৎসা হেলথ কর্নার ব্যবস্থা করার সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’
করোনা মোকাবিলায় এরইমধ্যে এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোর্টে স্কিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলোকে দিন দিন আরও জোরদার করা হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশের স্বাস্থ্যসেবায় জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা জনবল সংকট। এ কারণে নতুন করে আরও এক হাজার ৫০০ নার্স নিয়োগের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে মামলাজনিত কারণে হাসপাতালে ৩য়-৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সেটি আবারও চালু করা হচ্ছে। সারাদেশে প্রায় তিন থেকে চার হাজার কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে এবার ৩০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।’
দেশে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ বেড়ে গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিকসসহ নানা ব্যাধি বেড়ে গেছে। এ কারণে সব সরকারি হাসপাতালে এসব রোগের আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলার হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য ৮টি করে বেড স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেন্ট্রাল হাসপাতালগুলোতেও রোগীদের জন্য বেড বাড়ানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ। এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি রুহুল আমিন খন্দকার, ডিআরইউয়ের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীসহ অন্যরা।