Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক অনেক দেশের কাছে রোল মডেল’


১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:৪৮

ঢাকা: চীনকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও দেশের উন্নয়নের পথযাত্রায় অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। চীন বাংলাদেশের বাণিজ্য ও উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতায় চীনের সঙ্গে গড়ে ওঠা কৌশলগত সম্পর্ক অনেক দেশের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত চীনের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন- ‘অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে’

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর লিউ ঝিহুয়া, বিসিসিসিআই সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান মৃধা বেনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মুধাসহ চায়না দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিসিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত ১০ বছরে একক দেশ হিসেবে চীন সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশে। এর পরিমাণ প্রায় ১৮শ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৬৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা ওই অর্থবছরের মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ চীনে পাট ও তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করছে। আবার একই অর্থবছর বাংলাদেশ চীনে প্রায় ৮৩ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা ওই বছরের মোট রফতানি আয়ের ২ দশমিক ০৫ শতাংশ।

গাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে বড় কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। কারণ ভাইরাসের সংক্রমণের সময়ে চীনে নববর্ষের দীর্ঘ ছুটি চলছিল। প্রতিবছরই এই ছুটির অনেক আগেই বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারা চীন থেকে তাদের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করে থাকেন। এবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ফলে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে এখন পর্যন্ত কোনো পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ার কারণ নেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

গাজী গোলাম মর্তুজা আরও বলেন, চীন থেকে দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের শরীরে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে দুই দেশের সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য সম্পর্কের এই গভীরতার কারণে চীনের যেকোনো বড় ঘটনা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। করোনাভাইরাস সমস্যাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আশার কথা হলো, দুই দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বড় কোনো প্রভাব পড়েনি।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রভাব এখনো না পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিসিসিসিআই সভাপতি বলেন, চীন একটি বিশাল আয়তনের দেশ। মূলত হুবেই ও আশপাশের কয়েকটি প্রদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তোলার অংশ হিসেবে চীন একেকটি প্রদেশ বা অঞ্চলে একেক ধরনের পণ্য উৎপাদন কেন্দ্র বা হাব গড়ে তুলেছে। ফলে চীনে সব রকম পণ্য উৎপাদনে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়ার কথা নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে— এমন প্রদেশগুলো সংক্রমণের বাইরে থাকায় চীন থেকে পণ্য আমদানিতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো প্রভাব পড়ার কারণে নেই বলে আমাদের পর্যবেক্ষণ।

গাজী গোলাম মর্তুজা আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের পক্ষ থেকে আমরা চীনের সামগ্রিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজও (এফবিসিসিআই) এ বিষয়ে কাজ করছে। চীনের সঙ্গে যেসব খাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, সেসব খাতের সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, চেম্বারের পক্ষ থেকে দেশের ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার, বন্ধুরাষ্ট্র চীনের বর্তমান পরিস্থিতি আমরা যেন বন্ধুসুলভ মনোভাব নিয়ে পর্যবেক্ষণ করি। কোনো ধরনের গুজব বা অতিরঞ্জিত তথ্যে বিভ্রান্ত হবেন না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চীনের সরকার ও জনগণের দৃঢ় প্রচেষ্টার প্রতি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছি।

সবার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের এই সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের প্রতি ইতিবাচক ও বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী বজায় রাখতে হবে। একইভাবে চীন থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ শেষে স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পরিবার ও সমাজের সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।

অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব করোনাভাইরাস টপ নিউজ বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ-চীন বিসিসিসিআই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর