পরিশোধিত মূলধনের অভাব: পুঁজিবাজারে অনিশ্চিত ২৭ বিমা কোম্পানি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:০৬
ঢাকা: পরিশোধিত মূলধনের অভাবে ২৭ বিমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৮টি জীবন বিমা এবং ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বেঁধে দেওয়া পরিশোধিত মূলধনের অভাব রয়েছে এই কোম্পানিগুলোর। ফলে বিমা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের জারি করা পাবলিক ইস্যু সংশোধন করতে হবে, অথবা বিমা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা অংশের মূলধন বাড়াতে হবে। দুইটি প্রক্রিয়ায় বেশ জটিল হওয়ায় আপাতত এসব কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএর) সদস্য গকুল চাঁদ দাস সারাবাংলাকে বলেন, ২৭ বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে বড় কোনো অগ্রগতি নেই। কারণ বিমা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে পরিশোধিত মূলধন সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২৭ বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে পরিশোধিত মূলধন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে করণীয় নির্ধারণে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব পাওয়ার পর তালিকাভুক্তির বিষয়ে করণীয় ঠিক হবে।
সূত্র জানায়, বিমা আইন ২০১০-এর ধারা ২১ এবং তফসিল-১-এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিবন্ধিত লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা। এই ৩০ কোটি টাকার ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের এবং বাকি ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ১২ কোটি টাকা জনসাধারণ থেকে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে নন-লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। এই ৪০ কোটি টাকার ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ২৪ কোটি টাকা উদ্যেক্তাদের এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ বা ১৬ কোটি টাকা জনসাধারণ থেকে সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের জারি করা পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ (সংশোধিত)-এর বিধান অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও‘র (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করতে হবে। সে অনুযায়ী বিমা কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৭৫ কোটি টাকা। এই ৭৫ কোটি টাকার মূলধনের মধ্যে ২০১০-এর তফসিল-১ অনুযায়ী ৬০ শতাংশ হিসাবে উদ্যোক্তাদের অংশ ৪৫ কোটি টাকা এবং বাকি ৪০ শতাংশ বা ৩০ কোটি টাকা জনগণের অংশ হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা খাতের এই ২৭ কোম্পানির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকার কম।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইন পরিপালন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে গেলে বিমা কোম্পানির উদ্যেক্তাদের তাদের অংশের অতিরিক্ত অর্থ জোগান দিতে হবে। এই অতিরিক্ত অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিমা কোম্পানীর সক্ষমতা নেই। আর এ কারণে বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের উদোক্তাংশের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিদ্যামন আইন অনুযায়ী বিমা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
সূত্র জানায়, গত ২৯ জানুয়ারি ২৭ বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বৈঠকে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৭ বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকার কম। এই অবস্থায় কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকায় উন্নীত করতে উদ্যোক্তা অংশের ৪৫ কোটি টাকা করতে অতিরিক্ত অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তারা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং আইডিআরএ‘র মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আহ্বান করেন। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের বিষয়ে বিমা আইন, ২০১০-এর ধারা ২১-এর তফসিল-১ এর বিধানকে বিবেচনা নিতে বলা হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের জারি করা পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ (সংশোধিত)-এর বিধানকে শিথিল করার দাবি জানানো হয়। আর এ বিষয়ে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করলেই অনুমোদন পাবে— বিষয়টি এমন নয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে কোম্পানিগুলোকে পাবলিক রুল ইস্যু পরিপালন করে আসতে হবে। তা না হলে বিদ্যমান আইনে তালিকাভুক্তির কোনো সুযোগ নেই।’
তালিকাভুক্তির বাইরে ২৭ বিমা কোম্পানি
২৭টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ১৮টি জীবন বিমা কোম্পানি। এগুলো হলো—বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ, সোনালি লাইফ, জেনিথ ইসলামি লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ, এলআইসি বাংলাদেশ। এর মধ্যে সোনালি লাইফ পুঁজিবাজারে আসার জন্য কম মূলধন নিয়েই আবেদন করেছে।
২৭টি কোম্পানির মধ্যে বাকি ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি হলো— এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স, দেশ জেনরেল ইনস্যুরেন্স, মেঘনা ইনস্যুরেন্স, সাউদ এশিয়া ইনস্যুরেন্স, ইসলামি কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স ও সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে প্রথম চারটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে কম পরিশোধিত মূলধন নিয়েই আবেদন করেছে।
এর আগে, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মুস্তফা কামাল ২৭টি বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। ওই তিন মাসের পর আরও প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো বিমা কোম্পানিই পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত হতে পারেনি।