Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডায়াগনস্টিক দালালদের খপ্পরে ঢাকা মেডিকেল


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:৩৬

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের ৭ম তলার ৭০১ নম্বর ওয়ার্ড। বেডে থাকা এক রোগীর হাত থেকে রক্ত নিচ্ছে জিয়াদ নামের একজন (দালাল)। রোগীর নাম মাহমুদ হাসান (৫৬)। পাশেই বসা তার ছেলে রাকিব। সে জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে তার বাবা হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসক রক্তের কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, পপুলারে করাতে। একটি ফোন নম্বর দিয়েছেন। ফোন করলেই সেখান থেকে এসে রক্ত নিয়ে যায়।

কথা হয় সেই দালালের সঙ্গে। তার নাম জিয়াদ। সে পপুলার ডায়াগনিস্টক সেন্টারের ধানমন্ডি শাখায় কাজ করে। জিয়াদ জানায়, ঢামেকে পপুলারের দুটি শাখার লোক কাজ করে। একটি শান্তিনগর, অপরটি ধানমন্ডি শাখার। সব মিলিয়ে দুটি শাখার প্রায় ৩০ জন লোক রয়েছে ঢামেকে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢামেক হাসপাতাল অন্যতম। বলতে গেলে সারাদেশের মানুষের ভরসাস্থল হলো ঢামেক। এখানে প্রতিদিনিই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজারো রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। ঢামেকে আসা রোগীদের বেশির ভাগই গরিব ও নিরক্ষর। এদের মধ্যে কোনো কোনো রোগী ভালো চিকিৎসা পেয়ে ফিরে যায়। আবার কেউ কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে হারায় সর্বস্ব।

ঢামেকের পুরাতন ও নতুন ভবন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চিকিৎসকদের পেছনে তাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাড হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাছে যেতেই অনেকে চিনে ফেলে নিজেকে সরিয়ে নেয়। অনেকে আবার না চিনে দাঁড়িয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাম জানা অজানা প্রায় ১০ থেকে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোক ঢামেকে কাজ করে। মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে নার্সদের বসার কথা সেখানে কাজ করছে আব্দুল হক সুমন নামের একজন। পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, সে ধানমন্ডি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করে। ওয়ার্ডে ডিউটি ডাক্তারদের ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে এবং নিজেদের প্যাড এগিয়ে দেয়। সেই প্যাডে চিকিৎসকরা পরীক্ষার নমুনা লিখে দেন।

বিজ্ঞাপন

নতুন ভবনের নিচতলায় এক রোগীর রক্ত নিচ্ছে এক নারী। কাছে গিয়ে দেখা যায়, সে চানখারপুলের ‘হেলথ এইড‘ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মী। তার নাম সুরাইয়া আক্তার। পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে পাশের একজন জানায়, সে হাসপাতালের সরদার কিশোরের ভাগ্নি।

পপুলার ছাড়াও এখানে আছে গ্রিনরোডে অবস্থিত এসআরএল, ল্যাব সায়েন্স ও প্রাইম ডায়াগনস্টিক, চানখারপুলের পিওর ও দ্য প্যাথলজির দালালরা। এদের পাশাপাশি বকশিবাজারের মডার্ন হেলথ প্যাথলজি, লালবাগের পিপলস কেয়ার, ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন এবং নাম অজানা আরও অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দাললরা ঢামেকে কাজ করে থাকে।

এদিকে হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ জানান, নতুন ভবনের বিপরীত পাশে অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের এক প্যাথলোজি আছে। সেটির মালিক ঢামেকের ৪৫ জন চিকিৎসক। ঢামেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগের আবাসিক সার্জন (ইউরোলোজি) ডা. আফজালুর রহমান রানা।

ল্যাব সায়েন্সের দালাল হারুন অর রশিদ জানায়, তারাও ২০ থেকে ২২ জন রয়েছে এখানে। তাদের একেকজন একেক ওয়ার্ডে কাজ করে। এদের মধ্যে হারুন ও সাদিক জরুরি বিভাগের ১০১ ও ১০২ নম্বর ওয়ার্ডসহ অপারেশন (ইওটি) থিয়েটারে কাজ করে। চব্বিশ ঘণ্টাই তারা মেডিকেলে থাকেন। তাদের দিক নির্দেশনা দেন এরিয়া ম্যানেজার সুলতান।

আনোয়ার খান মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মশিউর রহমান নামের একজন জানায়, ঢামেকে তারা ১৫ থেকে ১৬জন কাজ করে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ওয়ার্ডবয়, সরদার, মাস্টার ও আনসার সদস্যরা ঝামেলা করে। এদের কিছু দিয়ে তারপর কাজ করতে হয়।

এসব ডায়াগনস্টিক দালালের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আব্দুল আজিজ খান বলেন, ‘আমাদের প্যাথলজিতে প্রায় সবধরনের পরীক্ষাই হয়। এবং তা সরকারি মূল্যেই। এখানে যে পরীক্ষাগুলো আছে তাতে আমার মনে হয় না রোগীদের বাইরে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি বাহিরে পরীক্ষা করতে হয়ই, তাহলে পিজি হাসপাতাল এবং বারডেম রয়েছে। সেখানে করতে পারে।’

নিচতলায় সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকে আনসার সদস্যরা। তাদের নাকের ডগা দিয়ে হাসপাতালে ঢুকছে এসব দালাল।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঢামেক দেশের স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের এই হাসপাতালটি অনেক বড়। এখানে অনেক ধরনের মানুষ আছে। দালাল আছে, চোর আছে। আমাদের প্যাথলজিতে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার দরকার হয় না।’

নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘শুনেছি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোক আছে। তারা রোগীর রক্ত নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করায়। আমরা অনেক চেষ্টা করছি দালাল ও চোর ঠেকানোর জন্য। তবে এদের দৌরাত্ম আগের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে এ বিষয়ে রোগীর স্বজনদেরও সচেতন হতে হবে। দালালের বিষয়ে আমরা হাসপাতালে মিনি মাইক লাগিয়েছি। সেখানে সার্বক্ষণিক  মাইকিং করা হচ্ছে।’

পরিচালক আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে যারা দালালি করছে, এটি তাদের বহুদিনের প্র্যাকটিস। এটা সারাতে সময় লাগবে। হাসপাতালে আনসার সদস্য বাড়ানো হয়েছে। আমরা অনেক দালাল ধরে পুলিশে দিয়েছি। এখনও যারা আছে তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।’

ডায়াগনস্টিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দালাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর