‘সব দলকেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মেনে রাজনীতি করতে হবে’
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:১৮
সংসদ ভবন থেকে: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা বলেছেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে অবশ্যই জাতীয় ঐক্য চাই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যাকারী, অগ্নিসন্ত্রাসী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনোদিন ঐক্য হতে পারে না। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে শুধু বিএনপি নয়, সব দলকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মেনেই করতে হবে। না মানলে সেসব দলের স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ওই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, সরকারি দলের আসলাম হোসেন সওদাগর, বেগম শামীমা আক্তার খানম, এম এ মতিন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, হাসিবুর রহমান স্বপন, এম এ লতিফ ও কাজী নাবিল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিএনপির মোশাররফ হোসেন, গণফোরামের মোকাব্বির খানসহ অন্যরা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘এই সংসদে আগে অকথ্য গালিগালাজ, অসভ্য ভাষার ব্যবহার দেখেছি, কিন্তু বর্তমান সংসদে সেই চিত্র আর নেই। আমরা বিরোধী দল হিসেবে সংসদে সরকারের ভাল কাজের প্রশংসার পাশাপাশি মন্দ কাজের সমালোচনা করছি। ‘
এসময় তিনি আগামীতে স্পিকারকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে সভাপতির আসনে থাকা ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এতো তাড়াতাড়ি বিদায় দিতে চাচ্ছেন?’ জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘বিদায় নয়, আপনাকে (স্পিকার) আরও উচ্চ আসনে দেখতে চাই। ’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে। এ অর্জন অনেক পরিকল্পিত ও কষ্টার্জিত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কূটনৈতিকভাবে দেশকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীদের মন্ত্রী করেছিল, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীকে ওআইসিতে মহাসচিব প্রার্থী করে মাত্র তিনটি ভোট পেয়েছিল। দেশের জন্য এটা কতটা লজ্জার।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রসূত (জন্ম নেওয়া) বিএনপির মুখে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, নির্বাচনের কথা মানায় না। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রতি রাতে শত শত সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছেন। তার পুত্র কুলাঙ্গার তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক থেকে জাতির পিতাকে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখায়। তাই শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে প্রত্যেক দলকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মেনেই করতে হবে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই আমাদের জাতির পিতা, এটা নিয়ে অন্য কথা জাতি সহ্য করবে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়া তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছিলেন। আর জেনারেল এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। কী নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তাই সমস্ত সামরিক স্বৈরশাসকদের চরিত্র একই হয়। জিয়ার আমলে শত শত সামরিক অফিসারকে কারাগারে পশুর মতো ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের অনেক নেতা আঙ্গুল তুলে দেখাতে চায়, বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র। কিন্তু মুজিব বর্ষে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হতে পারে না। ইসলামী বিরোধী শক্তিকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় দেশে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে।’
বিএনপির মোশাররফ হোসেন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সারাদেশে গণতন্ত্রহীনতা, শাসনহীনতা চলছে। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে আজ কারাবন্দী। ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে জামিনযোগ্য মামলাতেও জামিন দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় ব্যাংক লুটেরারা, হত্যাকারী, সন্ত্রাসীরা জামিন পেলেও মাত্র দুই কোটি টাকার মামলায় বিএনপি নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তার জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। প্রধানমন্ত্রী একজন সফল প্রধানমন্ত্রী, একজন মা। তাই দয়া করে, ৭৪ বছর বয়সী বিএনপি নেত্রীকে মুক্তি দেবেন বলে আশা করি।’
সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান কামাল বলেন, ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিকে অসম্ভব ভালোবাসতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি বঙ্গভবনের পরিবর্তে এই ছোট বাড়িটিতেই থেকেছেন। এই সংসদেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমাকে কে হত্যা করবে, আমি তো কোন অপরাধ করিনি। কিন্তু বেঈমান-মোনাফেক-বিশ্বাসঘাতক মুশতাক-জিয়াউর রহমানসহ কতিপয় সামরিক অফিসারের হাতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জীবন দিতে হলো। এ কলঙ্ক কোনদিন মুছবে না।’
কাজী কেরামত আলী পাটুরিয়া-দৌলদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বাজেট বড় হয়, কারণ দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি দাবি ও চাহিদা বেশি থাকে। দেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।’
আসলাম হোসেন সওদাগর বলেন, ‘খুনি জিয়াকে বিএনপির বন্ধুরা স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর চেষ্টা করে। কারণ বিএনপির জন্মই হচ্ছে অবৈধ, জন্মগতভাবেই দলটির মিথ্যাচারে অভ্যস্ত। ’ ২১ আগস্টসহ ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি-জামায়াত এতে হত্যাযজ্ঞ, নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা চালিয়েছে- জনগণ সেই দুঃশাসনের কথা কখনো ভুলবে না বলেও তিনি দাবি করেন।