Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুর্মিটোলায় ধর্ষণ: ভুল সংবাদ ছাপানোয় ঢাবি শিক্ষার্থী কারাগারে


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:০৭

ঢাকা: রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ প্রকাশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অথিত সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হওয়ায় অথিত সরকারকে রিমান্ড শেষে এরইমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অথিত সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেবে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র সারাবাংলাকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

অথিত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘ঢাবির ছাত্রী গণধর্ষণে ডিবির টিম জড়িত। মেয়েটিকে মনে করেছিল গার্মেন্ট শ্রমিক।’ এরকম একটি খবর অথিত সরকার তার নামধারী নিউজ পোর্টাল বেঙ্গলিপ্রেজেন্ট ডটকমে প্রকাশ করেন। পরে সেটি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়েন। যা ভাইরাল হয়। যাচাই-বাছাই না করে এরকম সংবাদ প্রকাশ করায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করে ডিবি পুলিশ।

ডিএমপির সাইবার অপরাধ টিম অনুসন্ধান শেষে শাহবাগ থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে একটি মামলা করে। এরপর গত ২১ জানুয়ারি অথিত গ্রেফতার হন।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে অথিত সরকার জানান, তার নিউজ পোর্টালটির কোনো অফিস নেই। সামান্য কিছু টাকা দিয়ে একটি সাইট খুলে মোবাইলের মাধ্যমে নিজেই পোর্টালটি চালাতেন তিনি। অর্থাভাব ঘোচাতে কোথাও কোনো চাঞ্চল্যকর খবর পেলে তা ইউটিউবে ছাড়তেন। কোনোরকম যাচাই-বাছাইও করতেন না।

বিজ্ঞাপন

অথিত সরকার ডিবিকে জানিয়েছেন, তার ধারণা ছিল ইউটিউবে ভিডিওটি ভাইরাল হলে গুগল অ্যাড সেন্স থেকে কিছু টাকা পাবে। তাই হয়েছে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে তার গুগল অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা হয়।

অন্যদিকে ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় আগামী সপ্তাহে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চার্জশিটে ধর্ষক মজনুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। মজনুকে গ্রেফতারের সময় খায়রুল ইসলাম ও অরুণা বিশ্বাসকে আটক করা হয়েছিল। চার্জশিটে তাদের দুজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মজনুই যে ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছিল এবং ধর্ষণের পর ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়েছিল, সেই ফোনই অরুণা ও খায়রুল কিনেছিল তা তারা আদালতে জানিয়েছেন।

ডিবি সূত্র জানায়, মজনু ধর্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, ঝোপের পাশে সেদিন সে অপেক্ষা করছিল। কিক্ষুক্ষণ পরেই ওই শিক্ষার্থী পায়ে হেটে যাচ্ছিলেন। এ সময় মেয়েটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঝোপের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই সময় ফুটপাতে আর কেউ ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার মো. মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মজনু একাই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। একাধিক প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। মজনুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দেওয়া তথ্য, মজনুর পূর্বের বিকৃতি মানসিকতার ইতিহাস এবং সবশেষে ডিএনও পরীক্ষার প্রতিবেদন মিলিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে, মজনু ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে।’

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন আমরা চার্জশিট প্রস্তুতের কাজ করছি। আগামী সপ্তাহের যে কোনোদিন মজনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।’

ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ নাজমুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, দেরিতে হলেও সিআইডি ধর্ষণের ঘটনাস্থল থেকে যেসব আলামত সংগ্রহ করেছিল, তা থেকেই মজনুর ডিএনএ নমুনা মিলেছে। হাসপাতাল থেকে যে ভ্যাজাইনাল সোয়াব সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছিল তা থেকে ডিএনএ মেলেনি। ঘটনাস্থল থেকে যে প্যান্ট পাওয়া গিয়েছিল সেখানে দুইজনের ডিএনএন নমুনা পাওয়া যায়। পরে মজনু ও ঢাবি শিক্ষার্থীর রক্ত ও লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্যান্টে পাওয়া নমুনার সঙ্গে দুজনের ডিএনএ মিলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব বর্তমানে আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে কোনো পরীক্ষা হাতে হয় না। অটোমেটিকভাবে প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে। কাজেই একটা শ্রেণি যারা ঢাবি শিক্ষার্থীর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের ধারণা ভুল। এখানে ঢাবির ওই শিক্ষার্থী মজনুর শিকারে পরিণত হয়েছে। আর মজনু তো আগে থেকেই এ বিষয়ে এক্সপার্ট। কাজেই মজনুকে কোনোভাবে ভালো বলার সুযোগ নেই।’

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলার অদূরে শেওড়া এলাকায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠে রওনা হন ওই শিক্ষার্থী। সন্ধ্যার ৭টার দিকে ভুল করে এক স্টপেজ আগেই কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান ওই শিক্ষার্থী। পরে সেখান থেকে ফুটপাত ধরে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ধর্ষণের শিকার হন তিনি।

রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে প্রথমে বান্ধবীর বাসায় যান ভিকটিম এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন।

এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে পরদিন ক্যান্টনমেন্টন থানায় অজ্ঞাতনামা একজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর তিনদিন পর র‌্যাব-১ এর একটি দল ধর্ষক মজনুকে শ্যাওড়া রেল ক্রসিং থেকে গ্রেফতার করে।

কুর্মিটোলা ছাত্রী ধর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষক মজনু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর