খালেদার মুক্তি প্যারোলেই!
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:১৭
ঢাকা: ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। আবেগঘন পরিবেশে প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি খালেদা জিয়ার সামনে উপস্থান করা হয়।
দেখা করতে যাওয়া তিন নেতার মধ্যে দুইজন প্যারোলের পক্ষে নানা ধরনের যুক্তি তুলে ধরেন। তারা বোঝাতে চেষ্টা করেন- নিজের জন্য না হোক, দল ও দেশের জন্য হলেও খালেদা জিয়াকে বাঁচতে হবে। আর বাঁচতে হলে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু কারাবন্দি অবস্থায় তার উন্নত চিকিৎসা হবে না। এজন্য প্রয়োজন মুক্তি।
কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। আর রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির নেই। সুতরাং এখন একটি পথই খোলা- নির্বাহী আদেশ বা প্যারোলে মুক্তি।
দলের শীর্ষ দুই নেতার এমন যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক উত্তর কী দেবেন— সেটিই ভাবছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু সেখানে উপস্থিত থাকা তৃতীয়জন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে তার মত তুলে ধরেন। তিনি বলার চেষ্টা করেন, প্যারোল মানেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো স্বীকার করে নিয়ে সরকারের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়ার জন্য প্যারোল মোটেই সম্মানজনক হবে না।
শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া ওই তিন নেতাকে জানিয়ে দেন— প্যারোল নয়, তারা যেন আইনি প্রক্রিয়ায় বা জামিনের মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। প্যারোল তিনি নেবেন না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া তার ‘আপসহীন’ অবস্থানে আর থাকতে পারছেন না বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দার বিএসএমএমইউ’র ভিসি বরাবর যে চিঠি দিয়েছেন, একেই ‘প্যারোল’ আবেদনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া প্যারোল প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে সরাসরি বলেছেন, ‘প্যারোলে হলেও আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করতে চাই। এ ব্যাপারে তিনিও দ্বিমত করবেন না। কারণ, তার শরীর অত্যন্ত খারাপ। এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।’
দলীয় সূত্রমতে, কেবল স্বজনরা নয়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতারাও চান প্যারোলে হলেও এই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা প্রয়োজন। শুরুর দিকে যেসব নেতা প্যারোলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারাও এখন প্যারোলের পক্ষেই মত দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, কারাগারে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াটাই খালেদা জিয়ার জন্য শ্রেয়।
এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘জীবিত খালেদা জিয়া আমাদের কাছে বেশি প্রয়োজন। সুতরাং স্বজনরা যদি খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে আবেদন করেন এবং ম্যাডাম যদি সেটা মেনে নেন, তাহলে আমাদের কিছু বলার থাকবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্যারোল চাওয়া না চাওয়া খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি কোনো মতামত দিতে পারব না। দলের হয়ে যদি কিছু বলতে হয়, সেটা মহাসচিব বলবেন।’
দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডাম এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে কারণেই হয়তো পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলের কথাটা বলা হচ্ছে। এমন কিছু হয়ে থাকলে দলের পক্ষ থেকে দ্বিমত করার কিছু থাকবে না। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, যারা আজ খালেদা জিয়াকে এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তাদেরকেও একদিন জনতার কাঠগারায় দাঁড়াতে হবে।’