‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়াতে বসছে সিসি ক্যামেরা’
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:০৫
ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি দুর্বল হয়নি। তাদের ওপর আরও নজরদারি বাড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্টগার্ড সদর দফতরে বাহিনীটির রজতজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়ার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করছে। নির্মাণ শেষ হলে সেখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাষানচরে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি দুর্বল হয়ে পড়েছে কিনা, যার কারণে সমুদ্রপথে রোহিঙ্গারা নৌকায় মালয়েশিয়া যাচ্ছিল জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘মোটেও রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি দুর্বল হয়নি। সেখানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যা টেকনাফের জনগণের ৩ গুণ। তাদের নজরদারিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ সব বাহিনী কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রোহিঙ্গা শিবিরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই কাজ এখন চলছে। আমাদের সেনাবাহিনী কাঁটাতারের বেড়া তৈরির কাজ এরইমধ্যে শুরু করেছে। মূল উদ্দেশ্য তারা যেন শিবির থেকে বের হয়ে আমাদের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে না যায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি আরও শক্তিশালী করতে ওয়াচ টাওয়ার এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। তারা যেন বের হতে না পারে সে জন্য আমাদের সকল বাহিনী তৈরি রয়েছে।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা থেমে যায়নি, আলোচনা চলছে। আশা করছি, একদিন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার।’
অবৈধভাবে ফিশিং ট্রলার ঢুকে সমুদ্রে মাছ ধরে অন্য দেশের জেলেরা, এ বিষয়ে আপনাদের করণীয় কী জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে প্রবেশের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। কোস্টগার্ড এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। গত কিছুদিন আগেও কোস্টগার্ড এমন ফিশিং ট্রলার আটক করেছে। তাছাড়া খুব শিগগিরই উপকূলীয় এলাকায় একটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম চালু করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেটি হয়ে গেলে আর কেউ অবৈধভাবে ফিশিং ট্রলার নিয়ে প্রবেশ করবে না।’
‘কোস্টগার্ড এখন আর ঠুঁটো জগন্নাথ নেই’ জানিয়ে এর আগে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘কোস্ট গার্ড আজ আর ঠুঁটো জগন্নাথ নেই। কোস্ট গার্ড একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দেশি-বিদেশি জাহাজ, স্পিডবোর্ড ও পেট্রোল বোর্ডের সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কোস্টগার্ডকে আজকের শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছি। কোস্টাল এরিয়া তো বটেই চোরাচালান রোধ, অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও মাদক চোরাচালান বন্ধে সফলভাবে কাজ করেছে কোস্টগার্ড।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি নতুন নতুন কাজও কোস্টগার্ডের দায়িত্বে ইনক্লুড হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য কোস্টগার্ড কাজ করছে। বর্তমানে কোস্টগার্ডের রয়েছে চারটি অফ পেট্রল বোর্ড, ২৩টি জাহাজ। রয়েছে নব্বইটি বিভিন্ন শ্রেণির বোট। রয়েছে ৫৪টি আউট পোস্ট স্টেশন।’
মানব ও মাদকপাচার, চোরাচালান রোধসহ নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে চলছে কোস্টগার্ড। মৎস্য সম্পদ রক্ষা জাটকা নিধন ও মা ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধে কোস্ট গার্ড সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনা করেছে।
২০১৯ সালে ১৯শ কোটি টাকার অবৈধ দ্রব্যাদি আটক করেছে কোস্টগার্ড। বনজ সম্পদ রক্ষায় ২ কোটি টাকা সমমূল্যের বিভিন্ন প্রকার চোরাকারবারি মালামাল জব্দ করেছে। উপকূলীয় এলাকায় জীববৈচিত্র্য রক্ষা ইলিশ রক্ষায় কাজ করেছে কোস্টগার্ড।
গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কাজেও সাফল্য অনেক। জলদস্যুদের হাত থেকে জেলেদের রক্ষার ক্ষেত্রেও কাজ করছে কোস্টগার্ড।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কৃতিত্ব ও সাফল্য অর্জন করায় কোস্টগার্ডের ৪০ জন সদস্যকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ( সেবা) ও প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড ( সেবা) পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
কোস্টগার্ডের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর রজতজয়ন্তীতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা) সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ অনেকে।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ভাষানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী