Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিটিয়ে হত্যার আলামত মৃতদেহে, সুরতহালে নেই


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:১৫

ঢাকা: ‘একজন মানুষকে কীভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেটি তার পেটে-পিঠে আঘাতের দাগ দেখলেই বোঝা যায়। আর এই দাগ খালি চোখেও স্পষ্ট। অথচ পুলিশ বলছে, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু গলা আর হাঁটুর নিচে একটু দাগ আছে। এর দ্বারা কি বোঝা যায় না পুলিশের ভূমিকা কী?’- বলছিলেন ইউসুফ আহমেদ রাসেল।

রাসেল সদ্য খুন হওয়া চিকিৎসক মোবারক হোসেনের (৩৩) চাচাতো ভাই। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর মাতুয়াইলে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক জামাল হোসেনের কক্ষ থেকে চিকিৎসক মোবারক হোসেনের (৩৩) ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে ডেমরা থানা পুলিশ। কিন্তু মৃতদেহটি উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করছেন স্বজনরা। তাদের দাবি, মোবারককে হত্যার পর জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলছে। এ ঘটনায় তাদের কোনো সহযোগিতাও মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

মোবারকের চাচাতো ভাই ইউসুফ আহমেদ রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘যিনি মরদেহের সুরতহাল করেছেন তার কাছ থেকে কিছু ছবি পেয়েছি আমরা। ছবিগুলোতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, মোবারকের পেটে ও পিঠে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন। এমনকি আঘাতের কারণে পেট ও পিঠ ফুলে গেছে। ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়, কতটা নির্বিচারে মারা হয়েছে তাকে। কিন্তু এই ছবি যিনি দিয়েছেন (এসআই শাহআলম) তিনি সুরতহালে লিখেছেন মৃতদেহের গলা এবং হাঁটুর নিচে সামান্য জখম রয়েছে।’

রাসেল বলেন, ‘এমন রিপোর্ট দেখে আমরা অবাক হয়েছি। তাই এ রিপোর্ট আমরা পর পর তিনবার প্রত্যাখানও করেছি। আমাদের দাবি ছিল যে, সে যেন মৃতদেহের পেটে-পিঠে আঘাতের চিহ্নের কথাটা উল্লেখ করে। কিন্তু ওই কর্মকর্তা বলেন, এভাবে নিলে নেন, না নিলে কিছু করার নেই। পরে আমরা ওই রিপোর্ট নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে। কিন্তু হত্যা মামলা হিসেবে ওসি মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সহায়তায় রাতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

মামলায় দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন ও তার সহযোগী মামুন। মামলায় বাদী হয়েছেন নিহতের বড় ভাই রুহুল আমিন।

রাসেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ঘটনায় যেখানে পুলিশ মামলা নিতে চায়নি সেখানে তারা যে আসামিদের ধরবে তার নিশ্চয়তা আমরা পাচ্ছি না। আমরা শুরু থেকেই পুলিশের অসহযোগিতা পেয়ে আসছি। যে ঘটনা পুলিশ জানল সকাল সোয়া আটটায় সেই ঘটনা নিহতের বাবাকে জানালো হলো দুপুর বারোটায়। এরকমটা কেন হলো? আমরা মনে করি পুলিশ নিহতের বাবাকে জানোনোর আগেই অনেক আলামত নষ্ট করেছে; যা তাদের আচরণে স্পষ্ট। আমরা চাই, এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদর যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’

নিহতের স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দীকুর রহমানকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কিন্তু তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে এ বিষয়ে কথা হয় মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাসির উদ্দিনের সঙ্গে।

এসআই নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় যিনি শুরুতে তদন্ত করেছেন (এসআই শাহ আলম) তিনি একাডেমিক কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব আমি পেয়েছি। গতকাল কি হয়েছে তা আমি জানি না। রাতে মামলা হওয়ার পর আসামি ধরতে অভিযানে ছিলাম। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি ধরতে পারিনি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সুরতাল রিপোর্টে কী কী উল্লেখ আছে জানতে চাইলে এসআই নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মৃতদেহের গলার সামনে ও পিছনে কালো দাগ এবং দুই হাঁটুর নিচে জখম ছাড়া আর কিছু নেই।’

‘কিন্তু স্বজনরা তো বলছে, তার পেটে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা আমি জানি না। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। এছাড়া আসামিদের গ্রেফতার করা গেলে এ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

মোবারকের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ট) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরির পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।

আঘাত পিটিয়ে হত্যা পুলিশ সুরতহাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর