‘ভোটারের কাছে না গিয়ে রাস্তায় শোডাউন করায় উপস্থিতি কম’
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:১৩
ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারের কাছে না গিয়ে রাস্তায় শোডাউন করেছে বলেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। এ জন্য রাস্তায় শোডাউনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগাঁরগাওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ১২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম এবং ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘একমাত্র ইভিএমই পারে ভোট জালিয়াতি বন্ধ করে প্রার্থীদের ভোটারের কাছে নিয়ে যেতে। নির্বাচনে কেবলমাত্র ভোটারাই হবেন ভোটদানের মালিক; শুধুমাত্র ইভিএমের মাধ্যমেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব।’
সিইসি আরও বলেন, ‘এবার বিরাট বিরাট মিছিল। মনে করেছিলাম, নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোট হবে। অলিগলি সব সয়লাব হয়ে গেছে পোস্টারে। সুতরাং নির্বাচনে ভোট বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেল উল্টো। আমার ধারণা, যারা ভোট দিবেন তাদের কাছে না গিয়ে প্রার্থীরা রাস্তায় গিয়েছেন। তাই ভোট হয়তো কম পড়েছে।’
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘আমেরিকায় এই রকম হয়, সুইজারল্যান্ড এ রকম করে, জার্মানির এ রকম হয়, আমাদের এরকম হয় না কেন?- কয়েকদিন আগে একদল পলিটিশিয়াল এসে এটা বললেন। আমি তাদের নিচু গলায় বললাম, আগে সুইজারল্যান্ড হতে হবে। আমাদের দেশে তো মলম পার্টি নিয়ে কাজ করতে হয়। ব্যাগ টানা পার্টি নিয়ে কাজ করতে হয়। ক্যাসিনো মেম্বার নিয়ে কাজ করতে হয়, পকেট মারা নিয়ে কাজ করতে হয়। তারা কেউ হয়তো ভোটার, কেউ হয়তো কমিশনার হয়ে যায়। গুলিস্তান মহল্লায় হকারদের কাছ থেকে টাকা নেয়, কিছুদিন পরে দেখা যায় যে সে একজন নেতা। প্রথমে পাতি নেতা, তারপরে উপনেতা, পূর্ণ নেতা, তারপরে কমিশনার। এগুলোও তো আমাদেরকে দেখতে হয়। এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হয়।’
জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সিইসির তদবিরও মাঝে মাঝে শোনা হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত করার পেছনে চারটি কমিটি কাজ করছে। কমিটিগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। আর তারা এমন শক্তিশালী যে, আমার কথাও শোনে না। আমি দুয়েকটা তদবির করলে মাথা এদিক-ওদিক নাড়ায়। কমিটি এমন শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় পোস্টারে আকাশ দেখা যায় না, শহরের বাতাস বন্ধ হয়ে যায়।’ তিনি এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
নতুন কর্মকর্তাদের নির্বাচনকালীন চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। নির্বাচনের সময় রাজনীতিবিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দক্ষ সমন্বয়কের মতো কাজ করতে।’
এ সময় নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে কর্মকর্তাদের আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনেরও আহ্বান জানান তিনি।