বিরোধ-বিতর্কে ‘বৃত্তবন্দি’ নাছির, সামলাতে না পেরেই ছিটকে পড়লেন!
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নেওয়া দলীয় সিদ্ধান্তে নাছিরকে হটিয়ে একেবারেই আলোচনার বাইরে থাকা রেজাউল করিম চৌধুরী মনোনয়ন পেয়ে যাওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম জুড়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে নাছির কেনো ছিটকে পড়লেন সে নিয়েও আলোচনার বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
যদিও মনোনয়নের তোড়জোড় শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্তে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘মেয়রের চেয়ার’ নাছিরের হাতছাড়া হবে, এটা ভাবতে পারেননি অনেকেই। তাই কী কী কারণে ছিটকে পড়লেন নাছির- তা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা।
চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকের মতে, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হওয়া, নিজস্ব বলয়ের বাইরে যেতে না পারা, বন্দরকেন্দ্রিক বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনায় পড়া, কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তেমন আশা তৈরি করতে না পারা, বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক তৈরি করা- এসব নানা কারণে ‘মেয়রের চেয়ার’ হাতছাড়া হচ্ছে নাছিরের। তবে শেষ মুহুর্তে বঙ্গবন্ধুর খুনির ভাইয়ের সঙ্গে নাছিরের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি তার বিরুদ্ধে চলে যায় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘যিনি এখন মেয়র আছেন, তিনি হয়ত চট্টগ্রামবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেননি। সেজন্যই নেত্রী তাকে বাদ দিয়েছেন।’
‘নেত্রী হয়তো মনে করেছেন, রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দিলে আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে, সেজন্য তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি মনে করি, নেত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,’ বলেন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের এই বর্ষিয়ান নেতা।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হন আ জ ম নাছির উদ্দীন। এর আগে ২০১৩ সালে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
তবে প্রায় তিন দশক ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ঘিরে বিভক্ত। ২০১৫’র ওই নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। আড়াই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। সেই বিতর্কে নিজেকে এতটাই ‘প্রতিহিংসার’ জায়গায় নিয়ে গেছেন আ জ ম নাছির, যে এবার নিজেকেই তার প্রতিফল ভোগ করতে হলো, মন্তব্য অনেকের।
নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি নাম না প্রকাশ করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলয়ের সাথে দিনে দিনে দূরত্ব এত বাড়িয়েছেন আ জ ম নাছির যে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না।’ তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই মনোনয়ন না পেলেও উনার নেতাকর্মীরা সবাই নাছিরের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছিলেন। কিন্তু মেয়র হওয়ার পর নাছির মহিউদ্দিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমন সব বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকেন, তাতে নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। মহিউদ্দিন ভাই জীবিত থাকা অবস্থায় নাছির উনাকে পাগল বলেও সম্বোধন করেন। মহিউদ্দিন ভাইয়ের স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়েও নাছির তার অনুসারীদের দিয়ে কথা বলাতেন। এসব বিষয়ে মহিউদ্দিন ভাইয়ের বলয়ের সঙ্গে নাছিরের দূরত্ব আরও বেড়ে যায়।’
নগরবাসী, তথ্যা রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় একাধিক ঘটনার কথা আসছে। সেগুলো স্মরণ করে সেগুলোকেই তারা নাছিরের এই ছিটকে পড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন।
২০১৭ সালে গৃহকর বাড়ানো নিয়ে মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। নাছিরের অনুসারীরা সে আন্দোলনে মহিউদ্দিনের অনুসারিদের অনেককে লাঞ্ছিত করেছিলেন।
এর আগে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণিকে হাটহাজারীতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। তাৎক্ষণিক বিচারে তাকে দুই মাসের সাজাও দেওয়া হয়। বর্ষীয়ান নেতা মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে নাছিরের অপমানজনক বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব ছিলেন রনি। মহিউদ্দিন অনুসারীরা মনে করেন, সরব রনিকে নীরব করতেই মেয়র নাছিরের ইন্ধনে তাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এবং দ্রুততার সাথে সাজা দেওয়া হয়।
মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর নগরীর একটি কলেজে আন্দোলন করতে গিয়ে অধ্যক্ষকে মারধর ও একটি কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে পদ ছাড়তে হয় রনিকে। এর পেছনেও মেয়রের হাত আছে বলে অভিযোগ মহিউদ্দিন অনুসারীদের।
সর্বশেষ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশের মঞ্চ থেকে মহিউদ্দিনের আরেক স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায়ও ক্ষোভ তৈরি হয়।
অভিযোগ আছে- নগর আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন আ জ ম নাছির। মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকাবস্থায় ২০১৬ সালে নগরীর কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেন হাসান মনসুরকে। কিন্তু নাছিরের বিরোধিতার কারণে মনসুর তার দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। একপর্যায়ে তাকে পদ ছাড়তে হয়। এই ধরনের ঘটনা থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগেও ঘটেছে।
জানতে চাইলে হাসান মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনার (নাছির) সরাসরি বিরোধিতার কারণে আমি পদ পাবার পরও কাজ করতে পারিনি। আমি তৃণমূলের ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছি। আমি মহিউদ্দিন ভাইয়ের কর্মী, তাই উনার বিরাগভাজন হয়েছিলাম। উনি আমাকে কোনো মিটিংয়ে পর্যন্ত ঢুকতে দেননি। উনি নিজের লোক ছাড়া কাউকে আপন করতে পারেন না। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে উনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করেছেন। অথচ আমরা সবাই মিলেমিশে উনাকে জিতিয়ে এনেছিলাম।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে গত সাড়ে চার বছরের কর্মকাণ্ড নিয়েও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আছে। নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থী হিসেবে আ জ ম নাছিরের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সেটাকে এড়িয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন সিটি করপোরেশনের কাজ নয় বলে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন পাঁচগুণ বৃদ্ধি করেন। মেয়াদের প্রথম তিনবছর সিটি করপোরেশনের দৃশ্যমান কোনো কাজই ছিল না। শেষ মুহূর্তে এসে খাল খনন, সড়ক ও নালা-নর্দমা সংস্কারসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প নেন। তবে নগরীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কাজ সঠিক সময়ে শেষ করতে না পারায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ নিয়ে সারা শহরে খোঁড়াখুঁড়ির সমালোচনাও সহ্য করতে হচ্ছে মেয়রকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তিনি সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেননি। এর মধ্যে গৃহায়ণের এক প্রকৌশলীকে চড় মারার অভিযোগ নিয়ে বিতর্কিত হন নাছির।
নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র হওয়ার পর তিনি দ্রুততার সঙ্গে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেন। এই কাজ প্রশংসিত হলেও বিলবোর্ড ব্যবসায় জড়িত নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। আর পাঁচ বছরে মেয়র হিসেবে তিনি এমন কোনো কাজ দেখাতে পারেননি, যা নিয়ে মানুষের সামনে ভোট চাইতে যাওয়া যেত। নগরীর উন্নয়ন কাজের সিংহভাগই সিডিএর।’
জানতে চাইলে মেয়রের অনুসারী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র হিসেবে নাছির সাহেব যা করেছেন, তা অতীতের মেয়রদের চেয়ে অনেক বেশি করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, উনার কাজ করার আগ্রহ ছিল। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে তিনি সিটি করপোরেশনকে মানুষের আস্থার জায়গায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, কাজের ধারাবাহিকতার জন্য তিনি আবারও মনোনয়ন পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত পাননি। নেত্রী কেন উনাকে মনোনয়ন দেননি, সেটা নেত্রীই ভালো জানেন।’
চট্টগ্রামে তিনটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটে গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে। মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেহেদি হাসান বাদলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মেয়রের অনুসারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় তার বাসা থেকে, ময়নাতদন্তে যাকে হত্যা করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে। দুটি হত্যাকাণ্ডে যারা আসামি হয়েছেন, তারাও মেয়রের অনুসারী। আসামিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করার অভিযোগ আছে মেয়রের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় দিয়াজের মায়ের তোপের মুখেও পড়েন মেয়র।
এরপর মহিউদ্দিনের অনুসারী চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে তার বাসার সামনে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়। এই হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হন মেয়রের অনুসারী নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম। সেই মাসুমকে নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মেয়রের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ আছে মহিউদ্দিন অনুসারীদের মধ্যে।
এদিকে শুধুমাত্র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলয়ের সঙ্গে নয়, মেয়রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য এম এ লতিফের সঙ্গেও। আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, মোশাররফের সংসদীয় আসনের এক বিএনপি নেতার ছেলেকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নাছির মোশাররফের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মোশাররফ। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে লতিফ-শামসুলের সঙ্গে বিরোধে জড়ানোর আলোচনা আছে। মহিউদ্দিনের সন্তান কোতোয়ালী আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ওয়ার্ড কাউন্সিলররা মেয়রের বিরাগভাজন হন বলেও আলোচনা আছে। এভাবে চট্টগ্রামে সংসদ সদস্যদের মধ্যে হাতেগোনা দু’তিনজন ছাড়া কাউকেই নিজের পাশে পাননি নাছির।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হন নাছির। চট্টগ্রামে এক সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়রকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন অভিযোগ করেন এবং নগরীর উন্নয়ন কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত নাছির আর প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি পাননি, এমন আলোচনাও রয়েছে।
তবে সর্বশেষ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি নাছিরের মনোনয়ন পুরোপুরি অনিশ্চিত করে দেয় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ওই ছবিতে নাছিরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের ভাই মামুনুর রশিদ হেলাল ও চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম খানকে দেখা যায়। এই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় ওঠে। যদিও নাছিরের অনুসারীদের দাবি, ছবিটি এডিট করা।
নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবার মনোনয়ন পাওয়ার সময় নাছিরকে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। এবার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তেমন বিরোধিতা ছিল না। তবে চট্টগ্রামের নেতাদের পাশে পাননি নাছির। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- তিনি সার্বজনীন নেতা হতে পারেননি। পেশীশক্তি নির্ভর রাজনীতির কারণে তাকে অনেকে ভয় পান। এরপরও মনোনয়নের জোরালো আলোচনায় তিনি ছিলেন। কিন্তু ফেসবুকে ছবিটি কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার মতো হয়েছে।’
এসব বিষয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা। তবে মেয়রের অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে। বিরোধিতাও থাকবে। কোনো নেতা বেশি পছন্দের, কোনো নেতা কম পছন্দের, এসব থাকবেই। নাছির ভাইয়েরও ছিল এবং আছে। তবে আমরা একটা দল করি। দলের সিদ্ধান্ত সবসময় শিরোধার্য। আমরা হতাশ নই। রাজনীতিতে হতাশা-আক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। রাজনীতি হচ্ছে একটা আদর্শ।’
তবে এতকিছুর পরও মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীনের কিছু কাজ প্রশংসিত হয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। বিশাল বিশাল বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে মেয়র চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনেছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে গৃহস্থালি ময়লা সংগ্রহ করার কাজও নগরবাসীর মধ্যে সাড়া ফেলে। ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’র স্লোগান দিয়ে নির্বাচিত হওয়া নাছির নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে দৃশ্যমান সৌন্দর্য বর্ধন করেন। সড়কবিভাজকে ম্যুরাল বসিয়ে ও গাছ লাগিয়ে এবং আলোকায়নের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করার চেষ্টা করেছেন। সড়ক বাতিতে এলইডি লাগানোর একটি কার্যক্রম শুরু করেন। ঢাকার আদলে চট্টগ্রামেও বইমেলা শুরু করেছেন মেয়র।