‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের সঙ্গে আপস নয়’
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৩২
সংসদ ভবন থেকে: বিএনপি-জামায়াতকে ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা’ বলে অভিহিত করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা।
তারা বলেন, দেশের মানুষ আর বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো ধরনের ঐক্য বা আপস করে রাজনীতি করতে রাজি না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে কীসের ঐক্য? পাকিস্তানের প্রেতাত্মা এসব কুলাঙ্গারদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো প্রশ্নই উঠে না। আর কোনোদিন এসব মীরজাফরদের পক্ষে দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতি থামানো সম্ভব হবে না। কারণ দেশের জনগণ এসব মীরজাফরদের চিনতে পেরেছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে তাজুল ইসলাম, রুহুল আমিন রুহুল, সালমা চৌধুরী, ছোট মনির, কাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বিএনপির জাহিদুর রহমান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার এত উন্নয়ন করছে, এটা তাদের (বিএনপি-জামায়াত) সহ্য হয় না। তাই তারা শুধু আন্দোলন আন্দোলন বলে। টক শো’তে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার জন্য চিকিৎসার জন্য সাত জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার যে আসল সমস্যা মানসিক রোগ, এটার জন্য কোনো ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আদালতের রায়ে দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তাকে সরকার কীভাবে মুক্তি দেবে?
মন্ত্রী আরও বলেন, এই বিএনপি অতীতে যে দুঃশাসন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে, তা এখনও অব্যাহত রেখেছে। অনেকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন। কিন্তু এদের (বিএনপি-জামায়াত) সঙ্গে আবার কীসের ঐক্য? এদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো বিষয় নেই। এই কুলাঙ্গারদের সঙ্গে আপস করে আমরা কোনো রাজনীতি করতে রাজি নই।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, একজন দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কীভাবে সরকার মুক্তি দেবে? অসুস্থ হলে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আদালতই একমাত্র মুক্তি দিতে পারেন, অথবা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে সেটি বিবেচনায় আসতে পারে। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন ও দল হিসেবে বিএনপি কতোটা দেউলিয়া হয়ে গেছে যে একজন নেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করে।
তিনি বলেন, সমন্বিত ভর্তি আইন প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছর থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভিজ্ঞ, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন আধুনিক নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার ওপর আমরা জোর দিয়েছি।
জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের হিসাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের প্রস্তাব করে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের বলেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অনিয়মের সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। পৃথিবীর বহু দেশে সংখ্যানুপাতিকহারে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে যে দল শতকরা ২০ ভাগ ভোট পাবে, সেই দল সংসদের মোট আসনের ২০ ভাগ অর্থাৎ ৬০ জন সংসদ সদস্য পাবে। এতে নির্বাচনি ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হবে না। বরং নির্বাচনি ব্যবস্থা সুসংসহত হবে।
সাবেক মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক বলেন, মীরজাফর মারা গেছে, কিন্তু মৃত্যুর আগে বলে গেছে বংশধর রেখে যাব। সেই মীরজাফরের বংশধরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। কোনোদিনই এসব মীরজাফরদের পক্ষে দেশের এই উন্নয়ন-অগ্রগতি থামানো সম্ভব হবে না। কারণ দেশের জনগণ এসব মীরজাফরদের চিনতে পেরেছে।
তবে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন বিএনপির জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে দেশের মানুষ আজ বিপন্ন, শঙ্কিত। একাদশ জাতীয় নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না— তা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। কারাগারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে না। উনি দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভুগছেন। বিএনপি প্রধানকে ক্রমেই মুত্যুর দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। তিনি মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ নয়, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোও ধরে রাখতে পারেনি। দেশের এই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হবে। জনশক্তি থেকে বিপুল সংখ্যেক রেমিট্যান্স আসছে। তাই প্রণোদনা দিয়ে হলেও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আর উন্নয়নকেও টেকসই করতে হবে। নির্বাচনকে অর্থবহ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে বসতে হবে, নইলে ভোটের প্রতি মানুষের অনিহা দূর হবে না। কারণ নির্বাচনই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে তাজুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া দম্ভভরে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমনকি বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ’র কী রহমত, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে আজ ক্ষমতায়। আর খালেদা জিয়া বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারেনি। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করে। আর বিএনপি লন্ডন থেকে ফেসবুকে কমিটি করে। এই বিএনপি কোনোদিনই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবে না।
আপস জাতীয় সংসদ পাকিস্তানি প্রেতাত্মা বিএনপি-জামায়াত রাজনীতি সংসদ অধিবেশন