‘ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৫ দিনে কাটবে করোনার প্রভাব’
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:০২
ঢাকা: ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে মনে করছে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিবিএ)। অন্যদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংও বলছেন, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সব সক্ষমতাই চীনের রয়েছে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর চীনের বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে আগের চেয়েও ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দ্বিগুণ গতিতে কাজ করা হবে। রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যেও তেমন দ্বিমত নেই বিসিবিএ নেতাদের।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘চীনে করোনাভাইরাসের আক্রমণ ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা উঠে আসে। সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিবিএ)।
সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ চীনের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছে, মাস্ক পাঠিয়েছে। এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুন, সেটাও আমরা চাই না। সে কারণে আমরাও দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশকে সহায়তা করছি। করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে ৫০০ কিট-ও পাঠানো হবে বাংলাদেশে।
করোনাভাইরাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা চীনের রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের চীনের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যতটুকু প্রভাব পড়বে, তা কাটিয়ে ওঠার পর চীন দ্বিগুণ গতিতে কাজ করবে।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জমির। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে দুই দেশে যেন কোনো ভুল তথ্য ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তথ্যগত কোনো পার্থক্য যেন তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুই দেশেই একটি হটলাইন থাকা প্রয়োজন, যেন দুই দেশের জনগণ তাতে যোগাযোগ করতে পারে। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ডাক্তারদের সঙ্গে অন্তত দুই জন চীনা ডাক্তার থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিবিএ) সভাপতি যাদব দেবনাথ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে চীনে আমরা যে সুবিধা পাই, অন্য দেশে তা পাওয়া সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে অন্য দেশে যেতে হবে, আমরা মনে করি তার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ বাংলাদেশের জন্য চীনের বিকল্প বাজার হতে পারে না।
তিনি বলেন, এছাড়া চীনের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত আপডেট জানিয়ে যাচ্ছেন। ওহাং অঙ্গরাজ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং পণ্যের তেমন কোনো কারখানা নেই, সেখানে মূলত ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি হয়ে থাকে। গার্মেন্টসের উপকরণ আমদানি নিয়ে তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কাঁচামালের জন্য বিকল্প বাজার খুঁজে পাওয়ায় সহজ হবে না। কারণ অন্য দেশে উপকরণের দামও বেশি। গণমাধ্যমসহ ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে করোনাভাইরাস নিয়ে ভুল তথ্য বা ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে যাদব দেবনাথ বলেন, এটা (করোনাভাইরাস) কোনো সমস্যা নয়। চীনে নতুন বছরের ছুটি শেষ হচ্ছে। এখন আর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে। কিছু কিছু অফিস খুলতে শুরু করেছে। চীনের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। তারা অনলাইনে এখন কাজ করছে। ফলে সমস্যা স্থায়ী হবে না।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে প্রকৃত চিত্র থাকা দরকার। গরম এলে চিত্র পাল্টে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের অনেক উন্নয়নের ভাগ্য চীনের ওপর নির্ভর করছে। চীন যেন বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। মানবিক ইস্যুকে মানবিকভাবেই দেখতে হবে। প্যানিক সৃষ্টি না করে বাস্তবতার মধ্য দিয়ে দুই দেশকে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তরুণ কান্তি দাস ও অ্যাডভোকেট কুতুব উদ্দিন।
করোনাভাইরাস করোনাভাইরাসের প্রভাব চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন বিসিবিএ লি জিমিং