Thursday 26 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওয়াসা এমডির দুর্নীতি: ১১ মাসেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি মন্ত্রণালয়


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:২৮

ঢাকা: ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানসহ দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এখনো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন জমা দেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুদকের পাঠানো চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। অথচ ১১ মাস অতিবাহিত হলেও এর কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়। এমনকি তদন্তের অগ্রগতি জানতে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে চিঠিরও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান, ওয়াসার পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কাশেম ও প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ জমা দেন ঢাকার গোপালগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে গত বছরের ১২ মার্চ দুদক থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।

দুদকের সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার এমডিসহ দুই পরিচালকের দুর্নীতি তদন্তে করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) মো. জহিরুল ইসলামকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন— স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্মসচিব, নগর উন্নয়ন-২-এর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব এবং পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা একজন উপসচিব।

মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি যে ১১ মাসেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি, সে বিষয়ে দুদক থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও সচিব কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে দুদক সূত্র জানা যায়, মন্ত্রণালয়কে পাঠানো প্রথম চিঠির কোনো উত্তর না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর মন্ত্রণালয়কে আরও একটি চিঠি দেয় দুদক। কিন্তু সেই চিঠিরও কোনো উত্তর দেয়নি মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে অবশ্যই প্রতিবেদন শেষ হয়েছে। তবে কেন তা দুদকে পাঠানো হয়নি, সেটা আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। আর কেন দুদকে প্রতিবেদন পাঠাতে দেরি হয়েছে, তারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাকসিম এ খান। প্রতিবারই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো এক আজানা ‘খুঁটির জোরে’ ফের নিয়োগ পান তিনি। তার নিয়োগ নিয়ে খোদ ওয়াসা বোর্ডের আপত্তিও ছিল। এমনকি বোর্ড সভায় তার নিয়োগও স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তিনি পার গেছেন এবং ওয়াসার এমডির পদ আঁকড়ে আছেন। সর্বশেষ গত বছর ওয়াসার পানি ‘সুপেয়’ মন্তব্য করে রাজধানীবাসীর রোষানলে পড়েছিলেন তাকসিম এ খান। সেবারও তিনি পার পেয়ে যান রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়ে।

তাকসিম খানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে টেন্ডার জালিয়াতিতে জড়িত হয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন তাসকিম এ খান। তার এ দুর্নীতির অন্যতম দুই সহযোগী হিসেবে নাম উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবুল কাশেম ও সহিদ উদ্দিনের। এই দুই কর্মকর্তাকে ওয়াসার নিয়োগ বিধির বাইরে গিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, তাসকিম এ খান মেঘনা নদীতে স্থাপিত গন্ধবপুর পানি শোধনাগর প্রকল্পে টেন্ডার বাণিজ্যের ম্যাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছিল ২ হাজার ২শ কোটি টাকা। এর জন্য টেন্ডার আহ্বান করলে সে সময় দেশি-বিদেশি ৯টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য বিবেচনা করে এমডি তার পছন্দের সুয়েজ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানিকে ৩ হাজার ২শ কোটি টাকায় কাজ পাইয়ে দেন। এছাড়া ২০১৪ সালে পদ্মা জলশদিয়া প্রকল্পেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে। এই প্রকল্পে কোনো টেন্ডারই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, তাকসিম এ খান ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকার প্রকল্পটি চায়না সিএমসি কোম্পানিকে পাইয়ে দেন। এই প্রকল্প থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তবে এই কাজে লোকাল এজেন্ট হিসেবে অরদিদ নামের একটি কোম্পানি তদারকি করে। এদিকে, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পেও টেন্ডার বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে ওয়াসার এই এমডির বিরুদ্ধে। এ প্রকল্পে ঠিকাদার হাইড্রো-চায়নাকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের গুলশান-বারিধারা লেক প্রকল্পেও ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এই প্রকল্পে দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রকল্পের নামে দুর্নীতির বাইরে ওয়াসায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও করা হয়। অন্যদিকে গত ১০ বছরে একই চেয়ারে বহাল থেকে নিজ ক্ষমতাবলে অর্থের বিনিময়ে ঢালাওভাবে বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়ার মতো অনিয়মের অভিযোগ করা হয় দুদকে।

নিয়োগ বাণিজ্যের প্রসঙ্গে বলা হয়, ওয়াসার নিয়ম ভেঙে পরিচালক আবুল কাশেম ও এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটান এমডি। বিষয়টি নিয়ে ওয়াসা কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এমনকি ওই সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত দু’জনের বেতন ভাতা বন্ধ এবং ওয়াসার সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির দাফতরিক আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রাণালয়ের সেই আদেশ অমান্য করে তাদের ওই পদে বহাল রেখেছেন ওয়াসার এমডি।

এছাড়া ওয়াসার কো-অর্ডিনেশন অফিসার শেখ এনায়েত আব্দুল্লাহ, সহকারী সচিব মৌসুমী খানম, চিফ ফাইন্যান্স অফিসার রত্নদ্বীপ বর্মনকে অর্থের বিনিময়ে ঢালাওভাবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে দুদকে দেওয়া ওই অভিযোগে বলা হয়।

তাকসিম এ খান অর্থের বিনিময়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসানকে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় পঞ্চম এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানকে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে পদোন্নতি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের আহ্বান বিএনপির
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫

সম্পর্কিত খবর