চীন যাত্রা থামেনি, কমেছে শুধু মাত্রা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:১৩
ঢাকা: জরুরি কাজ ছাড়া কেউ চীন যাচ্ছেন না। আবার কাজ না থাকলেও অনেকেই নিজ দেশে ফিরছেন। ফলে দোটানায় রয়েছে বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্স। এমন দোটানায় পড়ে কেউ পুরোপুরি বন্ধ করেছে আবার কেউ ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন খবর দিচ্ছে চীনে এয়ারলাইন্স বন্ধ বা ফ্লাইট বাতিলের।
রয়টার্স বা মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, এয়ার কানাডা, আমেরিকান ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, দক্ষিণ কোরিয়ার এয়ার সিউল এয়ারলাইন্স, ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার, এয়ার এশিয়া, ক্যাথাই প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স লুফথেন্সা ও ফিনএয়ার চীনে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া, ফিনল্যান্ড, মিশর, ডেল্টা এয়ারলাইন্স, হংকং, যুক্তরাজ্য, তানজানিয়া, ভারত, ফ্রান্স, কানাডা তাদের এয়ারলাইন্স বন্ধ রেখেছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ায় আকাশপথের যোগাযোগও অনেক বেশি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অন্য দেশের মতোই বাংলাদেশও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে চীনে বেসরকারি তিনটি এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। সেগুলো হচ্ছে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স। এই ৩টি এয়ারলাইন্সে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীন থেকে এসেছে ৮ হাজার ৮শ যাত্রী। আর বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার যাত্রী। তাই বলাই যায়, চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার মাত্রা কমলেও যাত্রা কমেনি।
এদিকে জানা গেছে, ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন চীনে একটি করে ফ্লাইট যেত ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ায় ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহে তিনটি করে ফ্লাইট (শুক্রবার, রোববার ও বুধবার) চীনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। অর্থাৎ সপ্তাহে ৪টি করে ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউএসবাংলা। ঢাকা-গুয়াংজু রুটে সংস্থাটির বোয়িং ৭৩৭ ফ্লাইট চলে। বিমানটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১৬৪ জন।
অন্যদিকে, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সপ্তাহে ৪টি করে ফ্লাইট রেখেছে। যাত্রী স্বল্পতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর আগে এয়ারলাইন্সটির সপ্তাহে সাতদিন চীনের ফ্লাইট ছিলো। সংস্থাটি ঢাকা-গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। আগে ২৬২ যাত্রীর বোয়িং দিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করলেও এখন ১৬৩ যাত্রী বহনকারী বিমান দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এরপরও বর্তমানে যাত্রী সংকটে রয়েছে এয়ারলাই্ন্সটি। যাওয়ার সময় অধিকাংশ আসন ফাঁকা থাকে তবে আসার সময় আসন পুরোপুরি ফুল থাকে।
চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলে ঢাকা-কুনমিং-ঢাকা রুটে। সপ্তাহে সাতদিনই তাদের ফ্লাইট চলত। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটি সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট রেখেছে। অর্থাৎ সপ্তাহে তাদের চারটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এছাড়া আগে তাদের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের বিমানে যাত্রীধারণ ক্ষমতা ছিল ১৬০ জন তবে যাত্রী কমে যাওয়ায় এখন ১৩২ আসনবিশিষ্ট বিমান দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরপরও যাত্রী স্বল্পতা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি ফ্লাইটে চীন যাওয়ার সময় যাত্রী থাকতো আসনের ৬০ শতাংশ। আর আসার সময় থাকতো ৯০ শতাংশ। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রী সংখ্যা নেমে আসে চীন যাওয়ার সময় ৩০ শতাংশ আর আসার সময় ৯০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ আমরা কিন্তু যাওয়ার সময় ঠিকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবে সরকার যেমন চীনে ফ্লাইট বন্ধ করতে চান না তেমনিভাবে আমরাও চীনে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করতে চাই না। সেজন্য ফ্লাইটের সংখ্যা কিছুটা কমানো হয়েছে। সামনে পরিস্থিতি ভালো হলে আবার প্রতিদিন ফ্লাইট যাতাযাত করবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী সমস্যা সৃষ্টি করেছে। চীন থেকে আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি হয়। এতে যেমন প্রভাব পড়বে তেমনি এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট বাতিলেরও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
চীনকে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আরও ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগবে মনে করে তিনি বলেন, যেসব এয়ারলাইন্সগুলো ইউরোপ ও আমেরিকাতে যাত্রী বহন করতো তারা বেশি লাভবান হবে। একই সাথে থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সিঙ্গাপুর রুটে এয়ারলাইন্সগুলোর অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। বলা যায়, যাদের নিতান্তই ট্রাভেল করা প্রয়োজন তারা ছাড়া বর্তমানে কেউ ট্রাভেল করছে না।