Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বললে এমনিতেই ছেড়ে দিতাম, এত অপরাজনীতির প্রয়োজন ছিল না’


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য দলের ভেতরে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে দাবি করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়ের সঙ্গে ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে ‘মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও অপরাজনীতি’ করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বললে মেয়র পদ এমনিতেই ছেড়ে দিতাম, এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও অপরাজনীতির তো কোনো দরকার ছিল না।’

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন এখনও মেয়রের দায়িত্বে থাকা আ জ ম নাছির উদ্দীন।

বিজ্ঞাপন

মেয়র নাছির বলেছেন, মনোনয়ন না পাওয়ায় তার মধ্যে কোনো ক্ষোভ, হতাশা, দুঃখ, বেদনা, আক্ষেপ, কষ্ট নেই। শুধু কষ্ট পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়ের সঙ্গে তার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায়, যা শতভাগ মিথ্যা।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তুমুল জল্পনা-কল্পনার মধ্যে সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয় নাছিরের একটি ছবি। নাছির বিরোধীদের ছড়িয়ে দেওয়া ওই ছবিতে তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের ভাই মামুনুর রশিদ হেলাল ও চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা একরাম খানকে দেখা যায়। এই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় ওঠে।

সেই ছবির প্রসঙ্গ টেনে নাছির বলেন, ‘তিনদিন আগে আমাকে একটা ছবি দেখানো হল। সেখানে দেখলাম, একটা ছবিতে গোল চিহ্ন করা হয়েছে, পাশে একরাম খান নামে একটা ছেলে। সে ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিল। ছাত্রলীগের শাহজাহান-কলিম কমিটির এক নম্বর সহ-সভাপতি ছিল। সে এখন তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ। সেখানে থানা আওয়ামী লীগের মেম্বার এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি।’

বিজ্ঞাপন

একরামের সঙ্গে পরিচয়ের প্রসঙ্গ টেনে নাছির বলেন, ‘আমি তাকে চিনি এভাবে, আমার চরম দুঃসময়ে একজন ব্যাংকারের মাধ্যমে, যিনি তার সঙ্গে একই কমিটিতে ছিলেন। দুঃসময়ে একদিন রাতে একরামের বাড়িতে গিয়ে একনাগাড়ে প্রায় দেড়-দুই মাস একটা কক্ষে ছিলাম, সূর্যের আলোও দেখিনি। কক্ষটিতে সবসময় তালা মারা থাকত। শুধু ভাত-নাস্তার সময় সেটা দিয়ে যেত। সেভাবেই যোগাযোগ।’


এবার ছবি তোলার নেপথ্যের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে তার (একরাম) একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। একদিন আমাকে এসে বলল, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটা আপনি একটু উদ্বোধন করে দেন। আমি জাস্ট ওকে চিনি সে হিসেবেই নগরীর অক্সিজেনের ওখানে গিয়ে একটা কেক কেটে চলে এসেছি। আমার পাশে কে দাঁড়িয়েছে, না দাঁড়িয়েছে আমি দেখিওনি। ছবিতে আরেকটা যেটা বলা হচ্ছে শাহরিয়ার রশীদ খানের ভাই, তাকে আমি চিনিও না, জীবনে কোনোদিন দেখিওনি। সেই লোকের পাশে দাঁড়ানোর ছবি কিভাবে এসেছে, সেটা যারা ছড়িয়েছেন, তারাই বলতে পারবেন। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, তার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক, যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ নেই।’

এই ‘অপরাজনীতি’ কষ্ট দিয়েছে উল্লেখ করে নাছির বলেন, ‘যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে আমি সংগ্রাম করেছি, আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করছি, ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, রাজনীতিকে আমি এবাদত হিসেবে নিয়েছি, এখনও পর্যন্ত আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করছি, সেই জায়গায় ছোট্ট একটা মেয়র পদের জন্য এতকিছু করা হল। আমার কাছে মেয়র পদটা তো বড় না, রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়। কেউ যদি আমার কাছে এসে বলত, ভাই আমার মেয়রের পদ দরকার আছে, তুমি সরে যাও, আমি তো স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতাম।’

‘গতবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমি কি চেয়েছিলাম, আমি কি বলেছিলাম যে আমাকে মনোনয়ন দেন? আমি যথারীতি একটা মনোনয়ন দলের কাছে চেয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। আমি তো কোনো লবিং করিনি। তাহলে এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার, অপরাজনীতির তো প্রয়োজন ছিল না। এগুলো করতে গিয়ে কি হবে? দলই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরেকজন আ জ ম নাছির উদ্দীন তৈরি হওয়া তো সাধনার বিষয়। আমরা তো দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী। আমাদের তো নতুন করে পরিচিত হওয়ার সুযোগ নেই। সেজন্যই বলছি, মনোনয়ন না পেয়ে কষ্ট যদি পেয়ে থাকি এই জায়গায় কষ্ট পেয়েছি। একশতে একশতভাগ একটা মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার তো কোনো মানে হতে পারে না।’

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টির বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা তুলে ধরে মেয়র নাছির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক যখন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে সমাবেশ করছিলেন, আমি আ জ ম নাছির উদ্দীন অনেককে নিয়ে পরিকল্পনা করে, উনি বক্তব্য শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশফায়ার করে পুরো মিটিংটা পণ্ড করে দিই। তারপর থেকে ফ্রিডম পার্টি এই শহরের যেখানে যেখানে আছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে, প্রত্যেকটা জায়গায় হামলা করে করে এই শহরে আমিই ফ্রিডম পাটিকে দাঁড়াতে দিইনি। এই শহরকে শিবিরমুক্ত করতে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমিই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আমিই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। বায়তুল মোকাররমের সামনে গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদের সভায় আমার ফাঁসির দাবি করে প্ল্যাকার্ড বহন করা হয়েছিল। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় আমাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে। খালেদা জিয়া আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির এম মনজুর আলমকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে।

এবার নাছিরের বদলে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। আলোচনা আছে, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের অনেকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর পর তাদের তুমুল বিরোধিতার কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন নাছির। তবে নাছির বলেছেন, ‘মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি হতাশ নন। রেজাউল করিমকে জেতাতে তিনি জীবন বাজি রেখে কাজ করবেন।’

মতবিনিময় সভায় নাছির আরও বলেন, ‘আমি মাঠের কর্মী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন, আমাকে এই মেয়র পদে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমার কাছে শতভাগ শিরোধার্য। কর্মীদের বলেছি, তোমরা আমাকে জেতানোর জন্য যেভাবে কাজ করেছ, সেভাবে কাজ করলে আমাদের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জিতিয়ে আনতে হবে। আমিও কাজ করব।’

চট্টগ্রামবাসীর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসেন এটা আমার বোধগম্য ছিল না। মনোনয়ন না পাওয়ায় আমার নিজের মধ্যে কোনো হতাশা নেই, কিন্তু বাসায় অন্যদের কান্নাকাটি থামাতে থামাতে আমার দিন যাচ্ছে। অফিসেও অনেকে এসেছেন। অনেকের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, কান্নাকাটি করছেন। কিন্তু আমার মধ্যে বিন্দুবিসর্গও হতাশা-অভিমান নেই। আমি মনে করি, পদ-পদবি সাময়িক।’

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন- চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস। সা ধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের স্বাগত বক্তব্যের পর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সিইজে’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সদস্য কাজী আবুল মনসুর এবং সিইউজে’র সাবেক সভাপতি শহীদ উল আলম।

অপরাজনীতি আ জ ম নাছির উদ্দীন বঙ্গবন্ধুর খুনি মেয়র পদে মনোনয়ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর