‘হল বাঁচাতে ঋণ, শিল্প সুবিধা ও বিদ্যুৎবিল হ্রাসের পরিকল্পনা’
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৩২
ঢাকা: সিনেমা হল বাঁচলে চলচ্চিত্র শিল্প ও শিল্পীরা বাঁচবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া হল বাঁচাতে হল বাঁচাতে স্বল্পসুদে ঋণ, বিদ্যুৎ বিল হ্রাস, আমদানিতে ‘শিল্প’ সুবিধা, টিকিট থেকে প্রযোজকের আয়বৃদ্ধি ও নীতি সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি (বিএফপিডিএ), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা সমিতির সঙ্গে আমি আলাদাভাবে বসেছি। আজকে আমি একসঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। এর কারণ, অনেকগুলো হল বন্ধ হয়ে গেছে। হল না থাকলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না, আর চলচ্চিত্র না বাঁচলে শিল্পীরাও বাঁচবে না।’
চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যম হলো সিনেমা হল উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘কিছু সিনেমা টেলিভিশনে রিলিজ করা হয়। কিন্তু মূল মাধ্যম হচ্ছে সিনেমা হল। প্রযোজক সমিতির সভাপতি যথার্থই বলেছেন, এখন হল বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে। আবার প্রযোজকদের অসুবিধা হলো, একটি ছবি যখন তারা নির্মাণ করে, তখন টাকা উঠে আসে না। অর্থাৎ সমস্যা এখানে বহুমুখী।’
হল বাঁচাতে স্বল্পসুদে ঋণ, বিদ্যুৎ বিলহ্রাস, আমদানিতে ‘শিল্প’ সুবিধা, টিকেট থেকে প্রযোজক আয়বৃদ্ধি, নীতি সংস্কার, অবৈধ ডিটিএইচ উচ্ছেদ, বিদেশি টিভি চ্যানেলে অবৈধ বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ, দেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে ক্যাবলক্রমে প্রথমে রাখা দেশি গণমাধ্যমশিল্প বাাঁচাতে এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান সিনেমা হল বাঁচাতেও তার মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কিভাবে স্বল্পসুদে হল মালিকদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গেও আলাপ করা হবে এবং একটা সমাধানে পৌঁছানো যাবে।’
সেই সঙ্গে সিনেমা হলের বিদ্যুৎ বিল হ্রাসে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া পত্রের বিষয়ে আবারও তাগিদপত্র ও আলোচনা করা হবে, বলে জানান ড. হাছান। এছাড়া চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ ঘোষণার পরও শিল্পের মালামাল আমদানির ক্ষেত্রে যে সুবিধা আছে সেই সুবিধাটা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে, গেজেটে পরিবর্তন আনতে হবে, বলেন তিনি।
‘সিনেমা হল থেকে প্রযোজকরা টাকা পায় না’- সভায় উত্থাপিত এ বিষয়টি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন ‘প্রথম দিকে আমরা সিনেপ্লেক্সগুলোতে একটা হার নির্ধারণ করে দিতে পারি। পরবর্তী ধাপে আমরা সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলে যাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এবং এনবিআর-এর সঙ্গে যৌথসভা করে একটা নির্দেশনা খুব দ্রুত জারি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
গত দশকে সারা পৃথিবীতেই অনেক এক পর্দার হল বন্ধ হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘একক পর্দার সিনেমা হল বন্ধ শুধু আমাদের দেশের চিত্র নয়, পৃথিবীর বড় চলচ্চিত্র শিল্পস্থান মুম্বাই এবং কলকাতা শহরে গত একদশকে বহু সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে, এমনকি আমেরিকাতেও বন্ধ হয়েছে। এটি সারা পৃথিবীর চিত্র। কিন্তু সিনেমা হল ছাড়া চলচ্চিত্রকে বাঁচানো যাবে না। তবে আশার কথা, অনেকগুলো সিনেপ্লেক্স হচ্ছে।’
ড. হাছান জানান, ‘ঢাকা শহরে আগামী দেড় বছরের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টির বেশি সিনেপ্লেক্স হবে। চট্টগ্রাম শহরেও ৬-৭টি হবে, দেশের অন্যান্য জায়গাও হচ্ছে। সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হলেও, সিনেপ্লেক্স বাড়ছে। একটি প্রতিষ্ঠান সারাদেশে ১০০টি সিনেপ্লেক্স করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। আরও অনেকেই সিনেপ্লেক্স করছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হল সংকট কেটে যাবে। ইতোমধ্যেই সিনেমার যে দৈন্যতা ছিল সেটি কিন্তু কেটে গেছে, মাঝখানে ভালো সিনেমাই হতো না। এখন কিন্তু ভালো সিনেমা হয়। এখন সংকট হচ্ছে হলের, এক-দেড় বছরের মধ্যে হলের সংকটটাও থাকবে না। আমরা সরকারিভাবেও কিছু উদ্যোগ নিচ্ছি।’
বহুমুখী সমস্যা সমাধানে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা চেষ্টা করছি। এখানে আরও মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত। আমাদের মতো করে সবাই উপলব্ধি করে না। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে অনুদানের পরিমাণ এ বছর ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সিনেমাপ্রতি অনুদানের অংক ৬০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ ১০ কোটি টাকায় স্বল্পদৈর্ঘ্যসহ ১৫টি অনুদানের ছবি হবে প্রতিবছর। সেগুলোর তিনভাগের দুইভাগও যদি হলে মুক্তি পায়, তাহলে অন্তত ১০টা ছবি হলে মুক্তি পায়। সেইসঙ্গে আমরা নীতিমালা পরিবর্তন করছি, যাতে অনুদানের ছবিগুলোকে অবশ্যই হলে মুক্তি দিতে হয় আগে অনুদানে ছবি বানিয়ে হলে মুক্তি দিত না, আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিতো। সেজন্য হল ছবি পেতো না।’
চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচানো ও এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চেয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের লক্ষ্য শুধু অতীতের চমৎকার অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়, জাতির পিতার হাত ধরে যে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব বাজারেও প্রবেশ করবে এবং একসময় বিশ্ব বাজার দখল করবে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে সামসুল আলম, এম এস ইস্পাহানী, এ জে রানা, মিঞা আলাউদ্দিন, আর এম ইউনুস রুবেল, মো. আজগর হোসেন, বদিউল আলম খোকন, শাহিন সুমন, কবিরুল ইসলাম রানা, সোহানুর রহমান সোহান, সাঈদুর রহমান সাঈদ, ছটকু আহমেদ, আব্দুস সামাদ খোকন, কমল সরকারসহ অনেকে আলোচনায় অংশ নেন।
এছাড়া তথ্যসচিব কামরুন নাহারের পরিচালনায় বিএফপিডিএ সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ ও প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন।