খেলাপি ঋণ: সরকারি ব্যাংকে কমছে বেসরকারিতে বাড়ছে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:৩৫
ঢাকা: গত বছর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। একই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা মনে করেন, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির পাশাপাশি নীতিমালা অনুসরণ না করায় বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দিন দিন বাড়ছে। সেই হিসেবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায়ে নানা ধরনের ছাড় ও পুনঃতফসিল সুবিধার কারণে তাদের খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে।
ঋণ খেলাপি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খেলাপি। এটি বিতরণকরা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। মোট খেলাপির মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এটি বিতরণকরা ঋণের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, যা বিতরকরা ঋণের ২৪ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চার হাজার ৫৯ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়াও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দুই হাজার ১০৩ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করেছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। ফলে ২০১৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বেসরকারি খাতের ব্যাংকে স্বজনপ্রীতি বেশি। এতে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ উদ্ধারে চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং পরিচালকরা নামে বেনামে ঋণ নেওয়ায় তা আদায় করা যাচ্ছে না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি ব্যাংক নিয়ে বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা হওয়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কিছুটা কঠোর হয়েছে। এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট ও ৯ শতাংশ সরল সুদে সরকারি ব্যাংকগুলো নানাভাবে ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে এই খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমছে।
২০১৯ সাল শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ফলে গত বছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত বছর শেষে সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ছিল চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সারাবাংলাকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অনেক সময় তারা নীতিমালা অনুসরণ করে না। এ কারণে তাদের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সরকারি ব্যাংকগুলোকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণায় তাদের জন্য খেলাপি ঋণ উদ্ধার কিছুটা সহজ হয়। ফলে তাদের ঋণ কিছুটা কমছে।
২০১৯ সালের প্রথম নয় মাসে অর্থ্যাৎ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়লেও শেষ তিন মাসে কমেছে ২১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। একই বছরের জুন শেষে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর শেষে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।