Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলছে অপারেশন, রোগী বাজাচ্ছেন বেহালা! (ভিডিও)


১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:১৬

মস্তিষ্ক থেকে টিউমার সরানোর অপারেশন চলছিল। সেই অপারেশন যখন মাঝপথে, রোগী ডাগমার টার্নারকে (৫৩) ডেকে দিলেন চিকিৎসকরা। পেশায় বেহালাবাদক টার্নারের হাতে তুলে দিলেন বেহালা। বললেন, বাজাও! চিকিৎসকের এমন অদ্ভুত ‘আবদার’ রেখেওছেন টার্নার। অপারেশন টেবিলে যখন তাকে ঘিরে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা, তিনি হাতে তুলে নিলেন বেহালা। বাজালেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। থেমে ছিলেন না চিকিৎসকরাও, হাতে ছুরি-কাঁচি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলেন অস্ত্রোপচার!

বিজ্ঞাপন

ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও চিকিৎসকরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনেই তারা এ কাজ করেছেন। বেহালা বাজানোর সময় টার্নারের মস্তিষ্কের যে অংশগুলো সক্রিয় অবস্থায় থাকে সেগুলো যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই তারা এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এপি ও গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, অপারেশনের আগেই পুরো প্রক্রিয়াটি অবহিত করা হয় টার্নারকে। ওই সময় চিকিৎসকরা টার্নারের গোটা মস্তিষ্কের ম্যাপিং করে নেন। এর অংশ হিসেবেই বেহালা বাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় অংশগুলোর ম্যাপিংও করে রাখেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, এই অংশগুলো যেন আঘাত না পায় অপারেশনের সময়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী চিকিৎসকরা অপারেশন শুরুর পর একপর্যায়ে টার্নারকে জাগিয়ে তুলে বেহালা বাজাতে বলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও পরে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভায়োলিন বাজানোর সময় টার্নারের হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মস্তিষ্কের অংশগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

টার্নারের নিউরোসার্জন অধ্যাপক কিয়োউমার্স আশকান বলেন, আমরা জানতাম বেহালা বাজানো তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এটা বাজাতে তার মস্তিষ্কের যে অংশগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলো অক্ষত রাখাটা ছিল অপরিহার্য।

প্রফেসর আশকান জানান, অস্ত্রোপচারে ব্রেইন টিউমারের ৯০ শতাংশ সফলভাবে অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

‘আইল অব উইট সিমফোনি অর্কেস্ট্রা’তে বেহালা বাজান ডাগমার টার্নার। অস্ত্রোপচারের তিন দিন পর তিনি বাড়িতে ফেরেন। অপারেশনের টেবিলে যেভাবে তাকে বেহালা বাজাতে হবে, চিকিৎসকের এমন প্রস্তাবনায় রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। আর যেভাবে গোটা প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তাতে সার্জন আশকানসহ তার গোটা টিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ টার্নার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কখনো বেহালা বাজাতে পারব না, এমন চিন্তু কোনোভাবেই করতে পারি না। বেহালা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেটা প্রফেসর আশকান জানতেন। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণেই তিনি ও তার টিম প্রচলিত পদ্ধতির একটু বাইরে গিয়েই আমার অপারেশনের পরিকল্পনা করেছিলেন।’

টার্নার আরও বলেন, অপারেশনের সময় যে আমাকে জাগিয়ে তোলা হবে এবং বেহালা বাজাতে হবেএটি ছিল চমকপ্রদ একটি আইডিয়া। তারা যে যত্ন নিয়ে বেহালার প্রতি আমার ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিয়ে অপারেশনটি করেছেন, তাতে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

অস্ত্রোপচার বিচিত্রা ভায়োলিন মস্তিষ্ক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর