সংযোগ সড়কের অভাবে কাজে আসছে না বেলাবো’র একাধিক সেতু
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:২৮
নরসিংদী: সেতু নির্মাণের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের জনগণ। অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে আছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একাধিক সেতু।
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ও পাশ্ববর্তী কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাপুরের ১০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের স্কুল-কলেজ, বাজারসহ অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল একটি বাঁশের সাকো। বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চরকাশিমনগর বাজারের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৯ লাখ ৬১ হাজার ৬০৭ টাকা ব্যয়ে ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু নির্মাণের পর অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক তৈরি না করায় সেতু দিয়ে পারাপার হতে পারেনি এপার-ওপারের কেউ।
গোবরিয়া আব্দুল্লাপুরের বাসিন্দারা সারাবাংলাকে জানান, নদীর ওপারে বেলাবো’তে একটি হাসপাতাল ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ একটি বাজার আছে। এলাকার ৮০ শতাংশ ছেলেমেয়ে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। চিকিৎসার জন্যও তাদের সেখানকার হাসপাতালের ওপরই নির্ভর করতে হয়। বেলাবো’ই তাদের যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে কাছাকাছি এলাকা। কিন্তু সেখানে যাতায়াতে তাদের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ।
স্থানীয়রা বলেন, বর্ষকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই তাদের নদী পারাপারের একমাত্র উপায়। ফলে তাদের যাতায়াতের সমস্যা ছিল নিত্যদিনের। বছর ছয়েক আগে নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেই সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ও সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় সেতুটি তাদের কোনো কাজে লাগেনি।
এদিকে, বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বিন্নাবাইদা এলাকায় সুতিঘাট খালের ওপর ইয়াসিন মাস্টারের বাড়ির কাছে কোনো রাস্তা নেই। সেই খালি জায়গায় ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু তৈরি করছে স্থানীয় দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৬ টাকা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটিও জনগণ ব্যবহার করতে পারেনি। কারণ, সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তাবিহীন জঙ্গলবিশিষ্ট আড়িয়াল খাঁ নদের এক পাড়ে। এই সেতুটিরও দু’পাশে ওঠা-নামার জন্য কোনো রাস্তা বা মাটি নেই। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে আছে এ সেতুটি।
বিন্নাবাইদ এলাকার বাসিন্দা ইয়াছিন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
কেবল এই দুইটি সেতু নয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু ও কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন একাধিক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, যেগুলোর অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক নেই। ফলে সেতুগুলো কোনো কাজে আসছে না এলাকাবাসীর। অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক তৈরি করে সেতুগুলোকে ব্যবহারের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গোলাপ সারাবাংলাকে জানান, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সংযোগ সড়ক বিহীন যে সেতুটি রয়েছে, সে বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে প্রস্তাবনা রেখেছি। আশা করি শিগগিরই অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হবে। এতে করে দুই পারের মানুষের ভোগান্তি কমবে।
জানতে চাইলে বেলাব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা. নায়েমা তাবাছসুমা শাহ সারাবাংলাকে বলেন, সংযোগ সড়ক ছাড়া সেতুগুলো তৈরি করা ঠিক হয়নি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানগুলোর। আমি এই উপজেলায় নতুন কর্মকর্তা হিসেবে এসেছি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুতসম্ভব অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ শুরু করা হবে।