Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভাষার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল’


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:২০

ঢাকা: ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একসময় তার নামটা ভাষা আন্দোলন থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ইতিহাস ইতিহাসই। সেটি কেউ মুছে ফেলতে পারে না।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক প্রদান করেন। শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বক্তব্য শেষে পদকপ্রাপ্ত সুধীজনের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা দিতে গিয়ে আমরা রক্ত দিয়েছি। আমরা বাঙালি জাতি। পৃথিবীটা গোল। একা একা চলা যায় না। সারাবিশ্বকে নিয়েই চলতে হয়। তাই অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু নিজের ভাষাকে ভুলে গিয়ে নয়। নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া বা নিজের ভাষা বিস্মৃত হওয়া, এটি আমাদের জন্য মোটেই ঠিক না। ঘটনাচক্রে অনেক কারণে হয়ত মানুষকে বাইরে থাকতে হয়। তারপরও ভাষার মর্যাদাকে সবসময় আমাদের দিয়ে যেতে হবে।’

ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। আমরা চাই, এ গৌরবের ইতিহাস আমাদের দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ যেন জানে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনে স্বদেশী ভাষা, মিটে কি আশা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত এ কথা বলেছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন বিদেশি ভাষায় তার কাব্য রচনা করতে। তিনি চেষ্টা করেছিলেন সাহেব হতে। কিন্তু একটি পর্যায়ে এসে তিনি উপলব্ধি করেন আসলে সাহেব হয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। তাই ফিরে এসেছিলেন স্বদেশভূমিতে। স্বদেশি ভাষা ছাড়া যে কোনো তৃপ্তি হয় না সেটি তিনি উপলব্ধি করেছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করেছিলেন যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন দিয়ে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইবি ( গোয়েন্দা) রিপোর্টে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলা হয়- ১৯৫২ সালে জেলে থেকেও তিনি ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। জেলে গিয়ে ছাত্ররা তার সঙ্গে দেখা করতেন। তারা দেখা করতে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গিয়ে কী কথা বলতেন, তা শোনার জন্য বাইরে থেকে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছু শুনতে পাইনি। দায়িত্বরত পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল: ছাত্ররা যেনো জেলে এসে বৈঠক করতে না পারে, কিন্তু পুলিশ তা শোনেনি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো নেতার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদন কেউ প্রকাশ করেনি। কেন করেছি? তার কারণ হচ্ছে, আমি যখন দেখেছি, একটির পর একটি ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন বা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম সবকিছু থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নাম মুছে ফেলার একটি অপচেষ্টা দীর্ঘদিন এদেশে চলেছে। প্রায় ২১টি বছর। কাজেই আমি চেয়েছি, মানুষ যেন সত্যটি জানতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতৃভাষার মর্যাদা দিতে গিয়ে আমরা বাঙালিরা রক্ত দিয়েছি। আমরা বাঙালি জাতি। যদিও আমরা শোষিত বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু আমাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার পুরোটা জীবনটাই তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। যে আকাঙ্ক্ষা তিনি এদেশটা গড়ে তুলেছিলেন। আমরা তা পূরণ করতে চাই।’

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির জন্য কানাডাপ্রবাসী আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম নামক দুজন ব্যক্তির দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, সে কথা স্বীকার করে তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ভাষা শহীদদের অবদানের কথাও স্মরণ করে প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

একুশে পদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর