‘বেনাপোলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার তথ্য সঠিক নয়’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:৫৮
ঢাকা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে ঢুকেছেন— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর)। সংস্থাটি বলছে, যে ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে প্রচার করা হয়েছে, তার মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই। তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্যটি গুজব।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বেনাপোল স্থলবন্দরের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, বন্ধন এক্সপ্রেসের এক যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। চীন থেকে ভারত হয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও প্রচার করা হয় ফেসবুকে।
এ খবর ভাইরাল হতেও সময় নেয়নি। তবে আইইডিসিআর পরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা এ খবরকে নিছকই একটি গুজব বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, প্রতিটি বন্দরেই স্ক্যানারের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা আছে। সেখানে কারও মাঝে যদি কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়, তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমরা দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। দেশে কেবল আইইডিসিআরেই করোনাভাইরাস শনাক্ত করার পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। অন্য কোথাও এই পরীক্ষা করা হয় না। ফলে কেউ করোনায় আক্রান্ত কি না, এ তথ্য অন্য কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
ডা. ফ্লোরা আরও বলেন, আমরা তথ্য নিয়ে দেখেছি, ওই ব্যক্তি গত ২৯ জানুয়ারি চীন থেকে ভারতে পৌঁছেছিলেন। সেই হিসাবে কোয়ারেনটাইনের যে ১৪ দিনের মেয়াদ, সেটিও পার হয়েছে। তাকে এখন কোয়ারেনটাইনে রাখারও প্রয়োজন নেই।
পরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারত থেকে আসা কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। যে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছিল, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সুস্থ পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সতর্কতার কারণে তাকে ১৪ দিন বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সারাবাংলাকে বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আমাদের সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে জানতে পেরে আমরাই যোগাযোগ করেছি। যে ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন বলা হচ্ছিল, তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তিনি সুস্থ আছেন। তার তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো আছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচুর গুজব দেখতে পাচ্ছি। সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ, কেউ গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকলে অবশ্যই আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করবেন।
স্থলবন্দরের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের তথ্য ছড়ানোকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন সিভিল সার্জন ও আইইডিসিআর পরিচালকের দু’জনই। তারা বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকেই মানুষ সবসময় সঠিক তথ্যটি প্রত্যাশা করে। সেখানে তার কাছ থেকে তথ্য ছড়ানোটি অপ্রত্যাশিত।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও একজন যাত্রীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করার বিষয়টি বিদেশফেরত যাত্রীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে অবহিত হয়েছি যে কোনো এক স্থলবন্দরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা বিদেশ থেকে আগত একজন যাত্রীকে কোভিড-১৯ সংক্রমিত সন্দেহ করে তার ব্যক্তিগত পরিচয় সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে দিয়েছেন। এ ধরনের অপেশাদার আচরণ শুধু নৈতিকতাবিরোধীই নয়, সংবেদনশীল সরকারি তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন সংক্রান্ত সরকারি চাকরিবিধিরও লঙ্ঘন। কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ সংক্রমিত কি না, তা নিশ্চিত করার ও প্রকাশ করার সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইইডিসিআর। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা এ বিষয়টি আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ শনাক্তের জন্য সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকাররি কর্মকর্তা, তথা সর্বস্তরের জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে সহযোগিতা করতে গেলে তা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকেই বিপন্ন করবে, কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার ভয়ে তার তথ্য ও অবস্থান গোপন করতে পারেন। এ ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্যশীল ও শান্ত পরিবেশে পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
আইইডিসিআর করোনাভাইরাস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুজব বেনাপোলে করোনাভাইরাস রোগী যশোর সিভিল সার্জন