‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর উদ্যোগ নেব’
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১৯
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বেসরকারিভাবে মেয়র পদে বিজয়ী প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বাঙালির ইতিহাস গৌরবের, আত্মত্যাগের। মাতৃভাষা দিবসে শুধু শ্রদ্ধা জানালেই হবে না, এই দিবসে আমাদের বাংলাকে ভালোবেসে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একুশের প্রথম প্রহরে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর মাঠে মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন আতিকুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের গৌরবোজ্জল আত্মত্যাগের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে হবে। আগামী দিনগুলোতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর উদ্যোগ নেব।’
আমাদের মাতৃভাষার জন্য অনেক শহীদের রক্ত ঝরেছে উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রফিক, সালাম, বরকতসহ আরও অনেক শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মাতৃভাষা। মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যে ভাষা আন্দোলন তার মাধ্যমেই শুরু হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রাম। আজকে আমরা সবাই একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি এই উত্তরা-৪ নাম্বার সেক্টর পার্কে।’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই ভুলে গেছি, আমরা যে সময়ে বড় হয়েছি সে সময়ে পাড়ায় পাড়ায় থাকতো শহিদ মিনার। সেখানে আমরা ফুল দিতাম ও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতাম। এমন অনেক ঐতিহ্য কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে। আর সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে গত দুই বছর ধরে আমরা ‘ফিরে দেখা অমর একুশ’ শীর্ষক একটি আয়োজন করে থাকি শহীদদের স্মরণে। এবার এই অনুষ্ঠান তৃতীয় বছরে পা দিল। এখানে উত্তরার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই আসেন অংশগ্রহণ করতে। প্রায় সবাই অংশ নিয়েছেন আলপনা কর্মসূচিতে। অনেকেই নিজে থেকেই তুলি নিয়ে এসেছেন আকার জন্য, বিশেষ করে শিশুরা। পরে ওদের নিয়েই এই শহীদ মিনারে আসি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি’ গাইতে গাইতে।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি চাই যেন এখন যারা শিশু-কিশোর তাদেরকেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায় আমাদের ভাষাসৈনিকদের আত্মত্যাগ ও বাংলা ভাষার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে। এভাবে যদি সবাই প্রতিটি এলাকা থেকে এগিয়ে আসে ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য তবে আমি মনে করি শিশু-কিশোররাও উদ্বুদ্ধ হবে। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে, আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই তাদের স্মৃতির চরণে’ শুধু গাইলেই হবে না। এই গানের অর্থের সঙ্গে ভবিষ্যত প্রজন্মকেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে যাতে সেই শহীদের আত্মত্যাগ তারা বুঝতে পারে। আর এই কাজে একজন নাগরিক ও নগরবাসীর প্রতিনিধি হিসেবে চেষ্টা করবো যাতে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়।’’
উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরসহ ঢাকার শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছর অস্থায়ী শহীদ মিনার গড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে এসব শহীদ মিনারকে স্থায়ী রূপ দেওয়া ব্যবস্থা করবেন কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি অবশ্যই চেষ্টা করে যাবো। একই সঙ্গে আমি চিঠিও ইস্যু করতে চাই যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারকে স্থায়ী রুপ দেওয়া যায়। একই সঙ্গে এই দিনে যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে শহীদের ইতিহাস নিয়েও আলোচনা হয় সেটার আহবানও জানাবো। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও বেশি করে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। আর এগুলো যদি হারিয়ে যায় তবে আমাদের অস্তিত্ব কিন্তু হারিয়ে যাবে। এগুলো যতদিন পর্যন্ত থাকবে ততদিন থাকবে বাঙালির অস্তিত্ব।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালির অস্তিত্ব ও একুশে ফেব্রুয়ারি এবং বাঙ্গালির অস্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙ্গালির ঐতিহ্য ও আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস এগুলোর ঐতিহ্য আমাদেরই ধরে রাখতে হবে। আর আমাদের গৌরবোজ্জ্বল এসব ইতিহাস আমাদের বেশি আলোচনা করা উচিত সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যাতে সবাই সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।’
এছাড়া আগামী বছর থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যেনো শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি।