শহিদ মিনারের ওপর দিয়ে যেতে হয় শৌচাগারে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:২৩
মানিকগঞ্জ: শহিদ মিনারের পাশে শৌচাগার। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেই শহিদ মিনারটির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন শৌচাগারে। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৭৭ নং বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে চোখে পড়ে এ দৃশ্য।
অযত্ন আর অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনারটি। পাশের শৌচাগার থেকে ছাড়ানো দুর্গন্ধে দাঁড়ানো টেকা যায় না আশে পাশে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে দেখছেন এই দৃশ্য। তারপরও শহিদ মিনারটি স্থানান্তরের ব্যাপারে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই। বিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান কমিটি দুষছেন একে অপরকে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০০৭ সালে স্থানীয় বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহিদ মিনারটি নির্মাণ করে দেয়। এরপর ২০১৪ সালে তার পাশেই স্থাপন করা হয় শৌচাগারটি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা সুলতানা বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। শৌচাগার ও শহীদ মিনার একইসঙ্গে হওয়ায় আমি মর্মাহত। শহীদ মিনারের ওপর দিয়ে হেঁটে ছাত্র-ছাত্রীরা শৌচাগারে যাতায়াত করে। ২০০৭ সালে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে কিন্ত পরে কিভাবে তার পাশেই শৌচাগার স্থাপন করা হলো, এটা আমারও প্রশ্ন। যারা এই কাজটি করেছে তারা মোটেও ঠিক করেনি। তবে আমরা শহিদ মিনারটি স্থানান্তরের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা শহীদদের স্মরণে আমাদের এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহিদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্ত আগের কমিটিতে যারা ছিলেন তারা কিভাবে শহিদ মিনারের পাশে শৌচাগার নির্মাণ করে শহিদদের অসম্মান করলেন তা ভাবতে পারছি না। আমরা কমিটিতে আসার পর এটা স্থানান্তরের বিষয়ে কথা বলেছি। দ্রুত এই শহিদ মিনারটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা করবো।’
স্থানীয় বানিয়াজুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘শহিদ মিনার আর শৌচাগার এক স্থানে হতে পারে না। যেহেতু এটা সরকারি স্কুল তাই এর দায় দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব শহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে শৌচাগারের কাছ থেকে শহীদ মিনারটি সরিয়ে অন্য জায়গায় নেওয়া হোক।’
বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অভিভাবক শুকলা তরফদার বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা শহিদ মিনার পাড়িয়ে শৌচাগারে যাতায়াত করে থাকে। ময়লা আর্বজনা জর্জরিত হয়ে পড়ে শহিদ মিনারটি। পবিত্র এই শহিদ মিনারের পাশে শৌচাগার নির্মাণ কোনোভাবেই চলে না। এটা শহিদদের অবমাননা করা হয়েছে।’
বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের কোনো শহীদ মিনার ছিল না। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের ফান্ড থেকে ২০০৭ সালে এখানে শহীদ নিমার স্থাপন করে দিয়েছি। কিন্ত ২০১৪ সালে কিভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের পাশে শৌচাগার নির্মাণ করলো। এটা নির্মাণ করে তারা শহিদদের অসম্মান করেছে। এলাকাবাসীর পক্ষে আমিও এতে ক্ষুব্ধ। তাই দ্রুত শৌচাগারের কাছ থেকে শহীদ মিনারটি সড়িয়ে নেওয়ার দাবি আমারও।’