Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একুশের স্রোত মিশেছে শহিদ মিনারে


২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:১০

‘কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা/সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা/আর, আমি ডালের বড়ি

শুকিয়ে রেখেছি—/খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি?’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মা আর সরকারি চাকরিজীবী বাবার সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে তরীর বড় চেনা এই কবিতাটি। মেয়েকে একুশ আর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানাতে বাবা-মা যে তাকে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর এই কবিতাটি শুনিয়েছেন অনেকবার। ছোট তরী হয়ত জানে না, একুশ কি, ভাষা শহিদ কারা কিংবা শহিদ মিনার কি। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে গুটি গুটি পায়ে রাত দুপুরে শহীদ মিনারে এসেছে ফুল দিতে। তরীর বাবা চান তাদের সন্তান একজন দায়িত্বশীল বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। সে মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে জানুক। তাই তিনি মেয়েকে একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহিদ মিনারে নিয়ে আসেন। একইভাবে বিজয় দিবসে তারা স্মৃতিসৌধেও যান।

রাত ১২টা ১ মিনিটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রতির শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণের জন্য শহিদ মিনারের উঠোন খুলে দেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির উদ্যোগে ব্যানার ও ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মানুষ।

জনতার দেওয়া ফুলে সজ্জিত শহিদ মিনার

একুশ মানে প্রতিবাদ, একুশ মানে ভালোবাসা, একুশ মানে নতুন করে নিজেকে চেনা। তাই একুশের প্রথম প্রহর থেকেই বাঙালির ঢল নামে শহিদ মিনারের চত্বরে। নিরাপত্তার খাতিরে দীর্ঘপথ হেঁটে আসতে হয় বেদিতে ফুল দিতে। তাও মূল বেদিতে নয়, চত্বরের গোঁড়ায় প্রথম সিঁড়িতে। কিন্তু এটুকু কষ্ট যেন কোনো কষ্টই নয়। সাদা-কালো রঙের দেশি পোশাকে ছেলে-বুড়োসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শহিদ মিনারে ভিড় করেন।

বিজ্ঞাপন

মিরপুরের বাসিন্দা শাহিদা বেগম অন্তত ২৫ বছর ধরে প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারে আসেন। চেষ্টা করেন রাতেই আসতে, তবে মাঝেমধ্যে দিনের যেকোনো সময়েও আসেন। বলছিলেন, দেশ ও ভাষার প্রতি টান থেকেই ছুটে আসেন। আগে সন্তানদের নিয়ে আসতেন এখন আসেন নাতি-নাতনীদের নিয়ে। আজ যেমন সঙ্গে এসেছেন আত্মীয়-পরিজনের একটি দল। রাত তিনিটা বাজে পুরো পরিবার মিলে শহিদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়েছেন। সঙ্গে তার চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া নাতি রুদবা। এবারই প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহিদ মিনারে এসেছে সে। ভাষা শহিদদের বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর আনন্দে রাতের ঘুম ভুলে গেছে রুদবা।

কলকাতার বাসিন্দা অর্ঘ্য রয় চৌধুরী একুশের প্রথম প্রহরে এসেছেন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। অর্ঘ্য বলেন, বাঙলা আসলে ভাগ হয়নি, ভাগ হয়েছে এর সীমান্ত। বাঙালির ভাষা আর আবেগ একই।

স্বেচ্ছাসেকরা সারারাতই ব্যস্ত ছিলেন শহিদ মিনারকে সাজিয়ে রাখতে

তিনি বলেন, কলকাতায় বসে একুশে ফেব্রুয়ারি সেভাবে টের পাওয়া যায় না। বিচ্ছিন্ন কিছু অনুষ্ঠান, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির সময় তিনি ঢাকায় আসেন বাঙালি হিসাবে নিজের পরিচয়টাকে ছুঁয়ে দেখতে, উদ্বুদ্ধ হতে। এখানে আসলে তার চোখে জল এসে যায়। শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে মনে মনে বলেছেন ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।’

অর্ঘ্য বলেন, ‘আবার আসবো, এই ভাষা দিবস, এই ভালোবাসা, এই আত্মত্যাগ, আমার মনে হয় বিশ্বের প্রতিটা বাঙালির এই দিনটা এখানে আসা উচিৎ।’

রাতের প্রচণ্ড ভিড় কিছুটা কমে যায় রাত তিনটার পর। আবারও সকাল পাঁচটা নাগাদ আসতে শুরু করে প্রভাত ফেরির দল। এসময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতর, অধিদফতর আসে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, বিএসএমএমইউ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজসহ আরও নানা প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

এসময়ে ছাত্রীদের সঙ্গে আসেন কুয়েত-মৈত্রী হলের আবাসিক শিক্ষক খালেদা খাতুন। তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে তো আসতেনই শিক্ষকতা জীবনেও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবসময়ই প্রভাতফেরীতে আসেন। একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারে আসলে মনের মধ্যে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।

নানা বয়সী নানা অঙ্গনের মানুষে মুখর শহিদ মিনারের উঠোন। আলাউদ্দিন আল আজাদের স্বরে তাই বলা যায়, স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো চারকোটি পরিবার/খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য/পারেনি ভাঙতে।

২১ ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি টপ নিউজ শহিদ মিনার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর