চেতনার মিনারে শ্রদ্ধার স্রোত
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৫৯
ঢাকা: অপেক্ষা! দীর্ঘ অপেক্ষা! তবু ক্লান্তি নেই। নেই ক্ষোভ, নেই বিরক্তি! এ যে চেতনার মিনারে শ্রদ্ধায় অবনত চিত্ত। এখানে এলে শরীরের ক্লান্তি মনের প্রশান্তির কাছে হার মানে প্রতিবার।
অমর একুশের প্রথম প্রহরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফুল দিয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরেছিলেন শিশু একাডেমির প্রশিক্ষক বেলায়েত হোসেন। ভোর ৬টায় আবার এসেছেন প্রভাত ফেরির মিছিলে। সকাল পৌনে ১০টা বেজেছে শহিদ মিনারের বেদীতে পৌঁছাতে!
ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ। তবু নেই কোনো অনুযোগ। চেতনার মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েই ঘরে ফিরবেন বেলায়েত।
শ্রদ্ধা জানিয়ে বিদায় নেওয়ার সময় কথা হয় বেলায়েতের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিশু একাডেমির একজন কর্মী হিসেবে মনে করেছিলাম দোয়েল চত্বর এলাকা দিয়ে শহিদ মিনারে ঢুকতে পারব। কিন্তু পুলিশ যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। অফিসের কার্ড দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তবু একবারের জন্যও মনে হয়নি যে বাসায় ফিরে যাই। টিএসসি-পলাশী ঘুরে শহিদ মিনারে পৌঁছেছি।’
শুধু বেলায়েত নয়, শহিদ মিনারে আসা অনেকেই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন, শোনালেন কিছু অব্যবস্থাপনার কথা। তবুও এমন দিনে কারও বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ তাদের নেই। অগ্রজদের যারা লড়াই করে গেছেন ৬৮ বছর আগে, প্রাণ দিয়েছেন মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য, তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পাশে সরিয়ে রেখে এগিয়ে চলেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
সকাল ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও শত শত সংগঠনের হাজার হাজার মানুষ মিনারমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। শহিদ বেদী থেকে মানুষের দীর্ঘ লাইন ঠিক কোন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে, সেটা বলা মুশকিল। তবে যতদূর চোখ যায়, ততদূর পর্যন্ত কেবল মানুষেরই ভিড়।
নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন-সংস্থার ব্যানার নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ এসেছেন ব্যক্তি হিসেবে। কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। কারও কাঁধে এক-দুই বছর বয়সী সন্তান, যে কি না মাত্রই কথা বলতে শিখছে। যে যেখান থেকেই আসুক না কেন, সবাই কেবল প্রতীক্ষায়— কখন সময় হবে, কখন জানাতে পারবেন চেতনার মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ছবি: সুমিত আহমেদ
একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার শহিদ মিনার শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা