শ্রদ্ধার ব্যানারে দুঃখিনী একুশ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৩০
ঢাকা: আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। নানা উৎসবে আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জুড়ি মেলা ভার। এই অংশগ্রহণের সঙ্গে থাকে আরেকটি আনুষঙ্গিক বিষয়। সেটি হলো— নিজের নাম, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নাম জাহির করা।
আর এ জাহির করার অন্যতম উপায় ব্যানার। ব্যানারে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থার নাম তো লিখতে হয়-ই। সেই সঙ্গে লিখতে হয় দিবস সম্পর্কে দু’টো কথা। আর কথা মানে তো শব্দের খেলা। শব্দ মানেই তো বর্ণের মিতালি।
কিন্তু আমার বর্ণমালা তো আজন্ম দুঃখী। এই দুঃখী বর্ণমালার দুঃখ ঘোচাতেই তো এসেছিল একুশ। সেই একুশ নিজেই আজ দুঃখী। সেই একুশ এখনো অনেক দুঃখী। যে একুশকে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সহস্র জনতার ঢল, সেই জনতার হাতে হাতে যে ব্যানার, তাতে যে হাজারবার লেখা ‘ফেব্রুয়ারি’ বানানটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল!
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি শব্দের বানানে সবসময় ‘ই’-কার ব্যবহার করতে হবে। ‘ফেব্রুয়ারি’ শব্দটি বিদেশি হওয়ায় ‘ই’-কার ব্যাবহার তাই বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যানারে এ শব্দটি লেখা ‘ঈ’-কার দিয়ে— ‘ফেব্রুয়ারী’।
শুধু ‘ফেব্রুয়ারি’ নয়, ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা সংগঠনগুলোর ব্যানারে আরও একটি সাধারণ ভুল ‘শহিদ’ শব্দটি। এটিও বিদেশি শব্দ। তাই একসময় ‘শহীদ’ বানানটি চালু হলেও ২০১৫ সালে মুদ্রিত বাংলা একাডেমির অভিধানেও ‘শহিদ’ শব্দের বিকল্প ভুক্তি হিসেবেও ‘শহীদ’ স্থান পায়নি। তবু ‘শহীদ’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে, লেখায়।
এর বাইরে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ ও ‘অঙ্গীকার’ শব্দ দুইটিও বহুল প্রচলিত হলেও অনেক ব্যানারেই এই দুইটি শব্দের ভুল বানান চোখে পড়েছে। ছোটখাটো আরও ভুল বানানও ছিল বিভিন্ন ব্যানারে।
আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব অধিদফতর, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বদরুন্নেসা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, ২৭ নম্বর শাপলা-শালুক একাডেমি, দক্ষিণখান ইউনিয়ন যুবলীগ (উত্তর), হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ, বেসিক ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ব্যানারেই দেখা গেল বিভিন্ন ধরনের বানান ভুল। এর কোনোটিতে ‘ফেব্রুয়ারি’, কোনোটিতে ‘শহিদ’, কোনোটিতে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’, আবার কোনোটিতে ‘অঙ্গীকার’ বানানটি ভুল।
সূত্রাপুর থানা যুবলীগের ব্যানারটিতেও দেখা গেল ‘ফেব্রুয়ারী’ বানানটি। ব্যানারের সঙ্গে ছিলেন সূত্রাপুর থানা যুবলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন স্বপন। জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দায়টা আমার। আমারই ভুল। আমার উচিত ছিল নিজ দায়িত্বে ব্যানারের বানান ঠিক করে দেওয়া। সেটা আমি করিনি। সুতরাং দায়টা আমার। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’
শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তাদের অনেকেই সারোয়ার হোসেনের মতো স্বীকার করে নিচ্ছেন, শব্দের বানান নিয়ে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল তাদের। তবে কেউ কেউ বলছেন, বাংলা একাডেমি কোনো শব্দের বানান পরিবর্তন করলেও সে বিষয়টি বহুল প্রচারিত নয়। বিভিন্ন দাফতরিক কাগজপত্রেও একই শব্দের ভিন্ন ভিন্ন বানান দেখা যায়। ফলে বানান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
প্রভাতফেরি বাংলা বানান ব্যানারে ভুল বানান ভাষা আন্দোলন ভাষাশহিদ শহিদ মিনার