‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের শূন্যতা পূরণ করতেই দেশে আসে শাকিল’
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:১৫
ঢাকা: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেছেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আন্ডারওয়ার্ল্ডের নেতৃত্ব দেওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্ঠপোশকতাকারীদের গ্রেফতার হওয়ায় এই মুহূর্তে শূন্যতা বিরাজ করছে। সেই শূন্যতা পূরণ করতেই জিসানের হয়ে মাজহারুল ইসলাম শাকিল ঢাকায় আসে। র্যাবের দাবি, কোনো মায়ের বুক খালি করতেই পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। র্যব তাকে গ্রেফতার করায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। হাহাকার তৈরি হয়েছে। কে দেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নেতৃত্ব, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। কেউ জেলে বসে, কেউ দেশে বসে, আবার কেউ বিদেশ থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের অন্যতম সহযোগী শাকিল গত ১২ জানুয়ারি ঢাকায় আসে।’
সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘শাকিল ঢাকায় আসার পর থেকে র্যাবের গোয়েন্দা টিম তার ওপর নজরদারি শুরু করে। তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনও বন্ধ রেখেছিল সে। এক পর্যায়ে র্যাব জানতে পারে শাকিল ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। এক পর্যায়ে র্যাবের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কথা শুনে কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছাড়ে শাকিল। এরপর র্যাব-২ এর অধিনায়কের তৎপরতায় শনিবার ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল জানিয়েছে, সে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি করে আসছিল। তার তথ্য প্রমাণাদি র্যাবের কাছে রয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘শাকিলের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায়। সে ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতি শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে যৌথভাবে টেন্ডার বাণিজ্য শুরু করে। এরপর ২০১৩ সালে খালেদ ভুঁইয়ার সঙ্গে দ্বন্ধ দেখা দিলে সে গ্রামের বাড়ি ফেনীতে গিয়ে পারিবারিক ব্যবসা ও স্থানীয় রাজনীতিতে জড়ায়। ২০১৫ সালে ফের ঢাকায় এলে যুবলীগ নেতা জিকে শামীমের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জিকে শামীমের হয়ে সে টেন্ডার বাণিজ্য ও গরুর হাটের দখল নিয়ন্ত্রণ করত শাকিল।’
‘২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগের সহ-সম্পাদক রাজিব হত্যা মামলার এজাহারে শাকিলের নাম এলে সে চীন চলে যায়। সেখানে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনে বসবাস ও কার্গো সার্ভিসের কাজ করে। এরপর ২০১৮ সালে চীন থেকে সে দুবাই চলে যায় এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানেই ছিল। দুবাইয়ে থাকা অবস্থায় তার এক বন্ধুর মাধ্যমে সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে তারা একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা এবং তাদের বিভিন্ন সহযোগীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত।’- বলেন সারোয়ার বিন কাশেম।
র্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে জিসানের নির্দেশে বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শাকিল দেশে আসে। এর পর সে নাশকতা করার জন্য অসুস্থ সেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে র্যাবের অভিযানের কারণে তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।’
‘শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান এখন কোথায় আছে?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘শাকিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে জিসানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যা আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’