Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছে না: দেবপ্রিয়


২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:০৩

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এছাড়া এটাকে একটি বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনান্য ব্যাংকগুলোকে দেখভালের যে দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়িত্ব পালন করেনি। ফলে ব্যাংক খাতে আরও বেশি বিপর্যয় নেমে এসেছে।’

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত ব্যাংকিং কমিশন, সিপিডির প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

ব্যাংকিং কমিশন গঠনের রূপরেখা দিলো সিপিডি

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ অনেকে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইনিভাবে ক্ষমতায়িত থাকার পরও কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার পূর্ণক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেনি। ব্যাংক কমিশন গঠন করা হলে তা দেখা হবে কি না সেটাও জানার বিষয়। এছাড়া দুদকের কাছে ব্যাংকের যে সব মামলা চলে গেছে সেগুলোও কি কমিশন দেখবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কিছু মামলা কেন দুদকে গেল, বাকিগুলো কেন যায়নি? ব্যাংক খাতে যে নয়-ছয় চলছে এগুলোও আমরা কমিশনের আওতায় দেখতে চাই।’

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে, আমরা নাগরিকেরা একটা অসহায় আতঙ্ক নিয়ে ভয়ঙ্কর ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অব্যাহত রয়েছে। শত প্রতিশ্রুতির পরও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও খেলাপি ঋণ অব্যাহত আছে। কিন্তু এর নিচে লুকিয়ে রয়েছে প্রতিটি ব্যাংকের পুঁজির ঘাটতি, সঞ্চিতির ঘাটতি, তাদের প্রকৃত বাণিজ্যের লাভজনকের ঘাটতি। এখন ব্যাংকে মানুষের টাকা রাখার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমানত ও ঋণ সুদের হারেও সমস্যা রয়েছে। একইসঙ্গে কি পরিমাণ সুদে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেবে তাতে সমস্যা রয়েছে।’

‘কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে গোটা ব্যাংকিং খাত এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে হল মার্কের কেলেঙ্কারির সময় আমরা ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে বলেছি। সেই আলোকে এখন সবোর্চ্চ পর্যায় থেকে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের অনুমতি এসেছে। এতে আমরা আনন্দিত।’

দেশের ব্যাংকখাত এখন কি ধরনের পরিস্থিতিতে আছে তা নির্ধারণ করা এখন প্রথম কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত কাজ হলো প্রকাশিত এবং উদঘাটিত পরিস্থিতিতে জাতীয় অর্থনীতিতে কি ধরনের পরিস্থিতি হচ্ছে তার তাৎপর্যটা কী তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে কমিশনকে বলতে হবে। পাশাপাশি সরকার থেকে ইতোমধ্যে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও কমিশনের মতামত দিতে হবে। কারণ নতুন কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ দিতে হলে চলমান পদক্ষেপগুলোর মুল্যায়ন করতে হবে।’

সিপিডির এই ফেলো বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করার পরিবেশ আছে কি না? অথবা তারা অন্য কোনোভাবে রাজনৈতিক প্রভাবিত হচ্ছে কি না? এটার বড় প্রমাণ হলো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স কে পাবে, অর কে পাবে না। সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে না।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেবে না। তারপরেও তিনটা ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ক্ষমতা প্রয়োগ করার যে সুযোগ তা সীমিত। একইসঙ্গে বলা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা ও সক্ষমতা সীমিত। এত ব্যাংক বাড়লেও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত অধুনিকায়ন হয়নি। তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি।’

ব্যাংকিং খাতকে পুনরুদ্ধারে ফলপ্রসু, বাস্তবোচিত এবং টেকশই সুপারিশ দিতে হবে। যেগুলো হবে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদের।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘ব্যাংক কমিশন কি শুধু ব্যাংকিং খাতই দেখবে নাকি ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও দেখবে। কারণ ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ব্যাংকের চেয়েও খারাপ। ফলে এটা কি ব্যাংকিং কমিশন হবে নাকি ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর কমিশন হবে। তাও ম্পষ্ট করতে হবে।’ এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কমিশনের পরিধির মধ্যে যারা ব্যাংকের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে গেছেন, সে টাকা কিভাবে পাচার হলো, কেন ব্যাংকের টাকা বিদেশে যায় এবং কিভাবে যায় সে বিষয়েও ব্যাংক কমিশন কিছু বলবে কিনা?’

আগামী বাজেটের আগে ব্যাংক খাতের বিষয়ে জরুবিভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় সমস্যা আরও জঠিল হবে বলে আমরা মনে করি। তাই বাজেটের আগে ব্যাংক খাত নিয়ে কমিশন গঠন করে তার একটি অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন দিতে হবে। বাংলাদেশের এই মুর্হূতে ব্যাংক খাত নিয়ে একটা আস্থার সংকট, স্বচ্চতার এবং বিশ্বস্ততার সংকট রয়েছে। এই কমিশনকে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিভাবে এই কমিশনকে সাপোর্ট না দিলে এই কমিশন একটা কমিশনই থেকে যাবে। বাস্তবে কোনো কাজে আসবে না।’

ব্যাংকিং কমিশনকে সঠিকভাবে কাজ করতে হলে অর্থমন্ত্রণালয়ের সব ধরনের হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে। একইসঙ্গে কমিশনকে সব ধরনের হস্তক্ষেপ মুক্ত রেখে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এই কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক আশির্বাদ থাকতে হবে। কারণ এক সময় এটা অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল। পরে তা থেকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সমস্যা হয়েছে। বর্তমানে এটা রাজনৈতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।’

ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক সংকট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর