চালকবিহীন মেট্রোরেল চলবে রিয়েল টাইমে
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৫২
ঢাকা: এ বছরের জুন মাসে দেশে আসবে মেট্রো রেলের কোচ। ছয়টি কোচ মিলে হবে এক সেট মেট্রো ট্রেন। কোচগুলো আসার পর উত্তরা দিয়াবাড়িতে শুরু হবে ট্রায়াল রান। বলা হচ্ছে, দেশে আসা মেট্রোরেল হবে পুরোপুরি চালকবিহীন। তবে শুরুর দিকে কিছুদিন চালক রাখা হবে। ট্রেন চলবে রিয়েল টাইম অনুসরণ করে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ জুন বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে প্রথম মেট্রোরেলের কোচ। গত এক বছর থেকে জাপানে বগি এবং যাত্রীবাহী মেট্রোট্রেনের কোচ তৈরি হচ্ছে। ট্রেনের একটি নমুনা গত ডিসেম্বর মাসে দেশে আনা হয়েছে। রাখা হয়েছে উত্তরায় একটি কন্টেইনারের ভেতর। মার্চ মাসে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
সেখানে একটি ভিজিটর সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শন কেন্দ্র নামে এই ভবনটির উদ্বোধন করা হবে আগামী মাসে। এর ভেতর রাখা হবে নমুনা ট্রেন। এখানেই দর্শনার্থীদের টিকেট কাটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ান, নামা- এসব বিষয়ে ধারণা দেওয়া হবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ এন ছিদ্দিক সারাবাংলাকে জানান, ট্রেনের কোচগুলো দেশে আসার পর অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের (ওসিসি) সঙ্গে মিলে চলতে পারছে কি না তার জন্য ট্রায়াল রান দেওয়া হবে। এভাবে একটা একটা করে ট্রেন আসবে। প্রতি সেট ট্রেন আসার পর এভাবে ট্রায়াল রান দেওয়া হবে।
এরপর ২০২১ সালে বিজয়ের মাসে মেট্রোট্রেনে উঠবে রাজধানীর মানুষ। সেই লক্ষ্যকে মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। বলেন, ডিএমটিসিএল ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
২০৩০ এ দৃশ্যমান হবে ১২৯ কিলোমিটারের ৬টি মেট্রোরুট
দেশে আসা মেট্রোরেল ট্রেন সেট জাতীয় পতাকার রঙে সাজানো থাকবে। অর্থাৎ মেট্রো কোচে লাল সবুজের প্রলেপ থাকবে। পুরো ট্রেন সেট বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগি করতে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কোচের গ্লাসের অংশ বুলেটপ্রুফ রাখা হয়েছে।
একেকটি কোচে ১ হাজার ৭৩৮ জন যাত্রী যেতে পারবেন। প্রতিটি কোচের দুদিকে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটের ধরণ হবে লম্বালম্বি এবং প্রতিটি ট্রেনে প্রতিবন্ধীদের জন্য দুটি হুইলচেয়ার পাশাপাশি রাখার ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচের মধ্যে একটি কোচ শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকিগুলোতে নারী পুরুষ একসঙ্গে যেতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল এমডি জানান, ফজরের আজানের পর থেকে মেট্রো ট্রেন চলা শুরু করবে এবং চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে বিশেষ দিনগুলো যেমন কোনো খেলা বা বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলে সেদিন ট্রেন আরও বাড়তি সময় পর্যন্ত চালানো হবে।
মেট্রো ট্রেনে স্মাটকার্ড টিকিটিং পদ্ধতি থাকবে। এক্ষেত্রে দুই ধরণের টিকিট থাকবে। একটি একদিনের ভ্রমণের জন্য এবং একটি স্থায়ী। ট্রেন স্টেশনে টিকিট বিক্রির মেশিন বসানো থাকবে। মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব এপ্লিকেশনের মাধ্যমে মেট্রোরেলের টপআপ করা যাবে।
ডিএমটিসিএল জানায়, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সাড়ে ২১ কিলোমিটার হবে। উত্তরা কমলাপুরসহ ১৭টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয়স্বরণী ও মতিঝিল স্টেশন হবে আইনকনিক স্টেশন। বাকিগুলো সাধারণ স্টেশন হবে।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সারোয়ার জাহান বলেন, ‘পরিবহন সমস্যার সমাধানে মেট্রোরেলকে যদি সফল করতে হয় তাহলে অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে। কিন্তু সরকার সেসব সেক্টরের সমাধান না করে একের পর এক মেট্রোরেলের দিকে ঝুঁকেছেন।’
‘মেট্রোরেল গণপরিবহন হিসেবে অবশ্যই ভালো কিন্তু সেটা খুবই ব্যয়বহুল। এটির অপারেশন কস্ট অনেক। পরে দেখা যাবে সেই অপারেশন কস্ট বহন করতে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। এই পরিবহন ব্যবস্থাকে সরকার কতটা ভর্তুকি দিয়ে চালাবেন সেটাও একটা প্রশ্ন’ বলেন সরোয়ার জাহান।