ঢাকার ২ সিটির ১০ শতাংশ এলাকায় ডেঙ্গুর ‘ঝুঁকি বেশি’
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:২৮
ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপস্থিতি ‘ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা’য় পাওয়া গেছে। এই দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে অন্তত ১০ শতাংশ এলাকায় ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এ বছরও।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত ‘এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’র ডেঙ্গু মৌসুম পরবর্তী জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা.আফসানা আলমগীর খান। ডিসেম্বরে পরিচালিত বর্ষা পরবর্তী জরিপে উঠে আসা প্রতিবেদনের চিত্র এই কর্মশালায় তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয়ে থাকে ব্রুটো ইনডেক্স বা সূচকের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি ১০০ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা হয়ে থাকে। উত্তরে ৪১টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডে এ জরিপ চালানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান জানান, ডিএনসিসির ১২, ১৬, ২৮, ৩১ ও ১ এবং ডিএসসিসির ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে এইডিসের ব্রুটো সূচক মিলেছে ২০ পয়েন্টের বেশি। উত্তরের শুধু ১২ নম্বর ওয়ার্ডেই এই সূচক ৩০। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ শতাংশ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০ শতাংশ ওয়ার্ডে এডিসের ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে বলে জরিপে ওঠে এসেছে।
উত্তরে ৪১ ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডে এ জরিপ চালানো হয়েছে। ডিএনসিসির উত্তরা ও ধানমন্ডির দু’টি ওয়ার্ডে দু’টি করে এলাকায় জরিপ হয়েছে। এসব এলাকার এক হাজারটি বাড়িতে জরিপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা উত্তরে ৭৪ পয়েন্টের মধ্যে ৪০টিতে নারী এডিস মশা ও ৪১টিতে পুরুষ এডিস মশা পাওয়া যায়। অন্যদিকে দক্ষিণের ৬৩টি পয়েন্টের ৩৯টিতে নারী ও মাত্র ১০টিতে পুরুষ পাওয়া যায়। দক্ষিণে তুলনামূলকভাবে নারী মশার উপস্থিতি বেশি। আর ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে কাজ করে এই নারী এডিস মশা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৭ সালের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বর্ষা পরবর্তী জরিপ হয়নি। তবে সবগুলো ইনডেক্সেই ২০১৭ সালের চেয়ে এবার ব্রুটো ইনডেক্স ইতিবাচক। মশার উপস্থিতি, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগের বছরের তুলনায় কম পেয়েছি।
তিনি বলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বর্ষা পরবর্তী জরিপ হয়নি। তবে সবগুলো ইনডেক্সেই ২০১৭ সালের চেয়ে এবার উপস্থিতি কম। মশার উপস্থিতি, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগের বছরের তুলনায় কম পেয়েছি। মশা নিয়ন্ত্রণে এবার মশার প্রজনন উৎসে নজর দেওয়া হয়েছে। এক জায়গায় বেশি দিন পানি জমতে দেওয়া হয়নি। তবে নগরবাসীর আরও সহযোগিতা থাকলে ফলাফল অনেক ভালো হতো।
ডা. আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, যদি পানি জমতে দেওয়া না হয়, তাহলে মশার লার্ভাই হতে পারবে না। মশার উৎস ধ্বংস না করা হলে শুধু লার্ভিসাইডিং করে মশা কমানো যাবে না। নাগরিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তারা যদি পানির ড্রামগুলোয় বেশিদিন পানি জমিয়ে না রাখে, যদি বিষয়টিতে নজর দেয়, তাহলে মশা নিধন করে তাহলে মশা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ঢাকা জুরাইন এলাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারের নিচে জমে থাকা পানি হয়ে উঠছে মশার আবাস। আর তাই মশা নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজনন উৎসে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, বিভিন্ন নির্মাণ এলাকায় মশার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নজর দিলে মশক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকবে আশ্বাস দিয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকেই তারা সচেতনমূলক নানা কার্যক্রম করে করা হচ্ছে। প্রকাশিত জরিপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করায় মশা ও লার্ভা নিধন সহজ হবে। এ জরিপ মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এ বছরও ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে, বিশেষ করে প্রজননক্ষেত্র যদি সমূলে ধ্বংস না করা যায়।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌসী, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন, ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতর কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।