Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রামীণফোনকে টাকা দিতেই হবে: আপিল বিভাগ


২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:০৭

ঢাকা: গ্রামীণফোনকে বকেয়া টাকা পরিশোধ করতেই হবে। তা না করলে হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ আছে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে দেশের আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনের কাছে বকেয়া পাওনা সংক্রান্ত মামলায় এ মন্তব্য করেন তিনি। পরে আদালত গ্রামীণফোনকে তিন মাসের মধ্যে আরও এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।

সকালে এ মামলার শুনানির শুরুতে আদালতের নির্দেশে বিটিআরসিকে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে জানিয়ে হলফনামা দাখিল করেন গ্রামীণফোনের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বাকি টাকা কবে দেবেন? গ্রামীণ ফোনের আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন তখন বলেন, আমাদের ৬ মাস সময় দিন। রবিকেও ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধে ৫ কিস্তিতে দিতে সময় দেওয়া হয়েছে।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, টাকা দিতেই হবে। টাকা পরিশোধ না করলে হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ আছে তা আমরা প্রত্যাহার করে নেবো। আপনারা টাকা দিয়ে দিন আমরা বিটিআরসিকে বলে দেব যেন আপনাদের ব্যবসা পরিচালনায় কোনো ঝামেলা না করে। আদালত বলেন, বাকি ১ হাজার কোটি টাকা তিনমাসের মধ্যে পরিশোধ করুন। তখন গ্রামীণফোনের আইনজীবীরা ৫ মাস সময় চান। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সময় না বাড়িয়ে গ্রামীনফোনের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা চাই বিদেশি কোম্পানি এদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করুক। কিন্তু সে ব্যবসাটা করতে হবে এদেশের সকল আইন ও নিয়ম কানুন মেনে।

গ্রামীণফোনকে আরও ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ

আদালতে গ্রামীণফোনেরপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। অন্যদিকে, বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবে আলম ও আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে আরও এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আবার সময় চেয়ে আবেদন জানান। কিন্তু আদালত আরও এক হাজার কোটি টাকা তিনমাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনার মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। সেই হিসেবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই টাকা জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জমা দেওয়া না হলে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর হাইকোর্টের জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও তখন সতর্ক করে দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালতে দুইহাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশনার বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন রিভিউ আবেদন করে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আদালত ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। তার আগের দিন বুধবার অডিট আপত্তির দাবির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বিটিআরসিতে ১০০ কোটি টাকা জমা দিতে (১৯ ফেব্রুয়ারি) গিয়েছিল গ্রামীণফোন। তবে তা ফিরিয়ে দেয় বিটিআরসি।

অডিট আপত্তির ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বকেয়া রাজস্ব দাবি করে আসছে বিটিআরসি। এর মধ্যে বিটিআরসির নিজস্ব পাওনা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এই অর্থ আদায়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ। চিঠি দিয়ে বকেয়া অর্থ দাবির পর তা পরিশোধ না করায় ২০১৯ সালের এপ্রিলে গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি আজিয়াটার (রবি) ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়। বকেয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত অপারেটর দুটিকে এনওসি (নতুন সেবা প্রদান) করার সিদ্ধান্তও আসে।

তৃতীয় ধাপ হিসেবে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবেনা— সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিটিআরসি। সর্বশেষ ধাপ হিসেবে গ্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসক বসানোর ইঙ্গিত দেয় নিয়ন্ত্রণ কমিশন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে দেন-দরবার। গেল বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটগুলোর এক বৈঠকে সরকার নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে সরে আসার কথা জানায়। একইসঙ্গে আদালতে আইনি প্রক্রিয়াও চলতে থাকে।

গ্রামীণফোনের অর্থ পরিশোধ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর