মঙ্গলবার এনইসিতে উঠছে ২০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:১১
ঢাকা: দেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুমোদন পেতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। উন্নত দেশে যেতে ২০ বছর মেয়াদী এ পরিকল্পনটি তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে ২০৪১ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
এছাড়া মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ বছরে। এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের হিসেবে গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর থেকে ২০৩১ সালে বেড়ে হবে ৭৫ বছর। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হবে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সোমবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এনইসিতে অনুমোদন পেলে ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি আরও জানান, এর আগে দেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি (২০১০-২০২১) তৈরি করা হয়। এটি বাস্তবায়ন এনইসিতে করা হয় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১০-১৫) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) মাধ্যমে। ফলে ২০০৯ সালের ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে বেড়ে এখন আট শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু সুনিদিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট ও পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর কারণে।
নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে। সেটি আবার বাড়তে বাড়তে ২০৪১ সালে গিয়ে হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে চরম দারিদ্র্যের হার ২০২০ সালে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে পৌঁছাবে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশে। সেটি পরিকল্পনার শেষ বছর ২০৪১ সালে কমে দাঁড়াবে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশে।
অন্যদিকে মাঝারি দারিদ্র্য বর্তমান বছরের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৭ দশমিক শূন্য শতাংশে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষে ২০৪১ সালে এ হার হবে ৩ শতাংশের নিচে।
যেসব বিষয়ে বিশেষ নজর: পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বৈষম্য হ্রাস, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বহুমুখীকরণ, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা এবং এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকছে।
পরিকল্পনায় আরও যেসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগ খাতের বিশেষ উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি থাতের উন্নয়ন, বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন বিষয়। অর্থাৎ একটি দেশে উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে যা যা প্রয়োজন তার প্রায় সব কিছুই পকিল্পনাটিতে সন্নিবেশ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে গুরুত্ব: খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এর জন্য নির্ধারিত উদ্দেশ্যাবলী ও অভীষ্টে একটি উচ্চ আয়ের অর্থনীতির জন্য দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সঠিক ও সচল পথে পরিচালনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ও নীতিমালার মূল উপাদানগুলো হচ্ছে, ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিস্তারের পন্থা অনুসরণ করা হবে।
এছাড়া স্বল্পমূল্যে প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ করা। প্রাথমিক জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে বিনিয়োগ ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ। প্রতিষ্ঠিত সক্ষমতার দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতকণ। জ্বালানিতে বেসরকারি বিনিয়াগ উৎসাহিত করা। বিদ্যুৎ বাণিজ্যের অধিকতর বিস্তার। জ্বালানির উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ নীতি নিশ্চিতকরণ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ২০২১ ও ২০৪১ সালে মধ্যে নির্ধারিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হবে ৯২ হাজার মেগাওয়াটের এক বিশাল স্থাপনা। যার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৪ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
গ্রাম হবে শহর: সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার পূরণে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমানোর জন্য সব ধরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পরিকল্পনাটিতে। অর্থাৎ শহরের সব সুবিধা পৌঁছে যাবে গ্রামে। মানুষকে আর যেকোনো প্রয়োজনে শহরে ছুটতে হবে না। পরিকল্পনার খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বাস করবে শহরে। সুতরাং গ্রাম ও শহরের বৈষম্য আর থাকবে না। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই গ্রামকে শহর বানানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হলেও এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। কেন না প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ এই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ইতোমধ্যেই পরিকল্পনাটির যে ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে সেখানে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্রও নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, উত্তম পরিবহন সেবা এবং তথ্য প্রযুক্তি সেবা গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছে। রূপান্তরের এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ পরিকল্পনায় দুটি মূল বিষয়ের মধ্যে ত্বরান্বিত সমৃদ্ধি এবং অন্যটি অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। তবে ইতোমধ্যেই উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চলমান এ গতিকে আরও ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে সরকারের যে লক্ষ্য রয়েছে তা পুরণের প্রচেষ্টা থাকবে।