শ্রেয়ানের অস্ত্রোপচার করাতে হবে দুই মাসের মধ্যে
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৯:৩২
জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দীর্ঘ অপেক্ষা, সাত বছর। সাতটা বর্ষা, সাতটা বসন্ত। বিয়ের সাত বছর পর শিমুলের ঘর আলো করে আসে এক দেবদূত। নাম রাখা হয় শ্রেয়ান, অর্থ শ্রেষ্ঠ। সম্ভবত কোনো দম্পতির জীবনে এর চেয়ে ভালো উপহার আর হতে পারে না। তাই নাম রাখা হয়, শ্রেয়ান। সময়টা ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর।
শিশুটির জন্মই হয় অপরিণত বয়সে- মাত্র ৩২ সপ্তাহে। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের পরই তাকে নিতে হয় ইনকিউবেটরে। কেবল ইনকিউবেটরেই কাটে তার সাত দিন, পরে আরও পাঁচদিন হাসপাতালের বিছানায়। বাসায় নেওয়ার পর কিছুদিন সুস্থ থাকে। তারপর ফের অসুস্থ, চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়। সেখানে ধরা পড়ে নিউমোনিয়া। এরপর চিকিৎসকরা শিশুটির বাবা-মাকে যা শোনান, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তারা। এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন শিমুল।
তার ফ্যাকাসে-স্থির চোখে যেন মুহূর্তে ভেসে উঠল দুঃস্বপ্নের মতো দূর ভবিষ্যৎ। কিছুক্ষণ থেমে বললেন, কিন্তু এখন আমাদের আরও অনেক কিছুর জন্যই প্রস্তুত হতে হচ্ছে। জন্ম থেকেই ছেলেটা অসুস্থ ছিল। কিন্তু এই পর্যায়ে চলে যাবে- বুঝিনি। সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় গলা ধরে আসছিল তার, থেমে যাচ্ছিলেন বার বার।
এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি নীল হয়ে যেতে শুরু করে শ্রেয়ান। রাত ১১টার দিকে ভর্তি করা হয় শিশু হাসপাতালে। চিকিৎসকরা ইকো এবং আরও কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন। পরদিন সকালে রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যায়, শ্রেয়ানের হৃদপিণ্ডে দু’টি ছিদ্র রয়েছে, সমস্যা রয়েছে ভালভেও। চিকিৎসকরা জানান, আমার ছেলের অসুখটি ‘হাইলি রেয়ার-কমপ্লেক্স এবং ডেঞ্জারাস’। কিন্তু নিরাময়যোগ্য। আগামী দুই মাসের মধ্যে সার্জারি করানো প্রয়োজন। দেশে নয়, বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। শিশু হাসপাতালে কাটে সাতদিন।
শিমুল সরকার এবং তার স্ত্রী সোমা দে’র কাছে হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সময়। টিকটিক শব্দে ঘড়ির কাঁটা যেন যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুন। পাসর্পোট করতে দেওয়া হয়েছে- হাতে পেলেই ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করব, বলেন শিমুল।
বিভিন্ন টেস্ট রির্পোট ই-মেইল করা হয়েছে ভারতের বেশ ক’টি হাসপাতালে। অধিকাংশ হাসপাতাল থেকেই শিমুলকে জানানো হয়েছে, এটা ‘হাই রিস্ক পেসেন্ট’, এতো ছোট শিশুর চিকিৎসা করানো ‘ভেরি রিস্কি’!
শিমুল বলেন, কেবলমাত্র দেবী শেঠীর কাছ থেকে পজেটিভ রেসপন্স পেয়েছি। তারা আমাদের যেতে বলেছেন। তবে ডায়াগনোসিস করার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। সম্প্রতি দেবী শেঠীর হাসপাতাল থেকে তিন চিকিৎসক এসেছিলেন খুলনার একটি হাসপাতালে। আমি খুলনায় গিয়ে তাদের রির্পোটগুলো দেখিয়েছি।
উনারা বলেছেন, এই রোগীর বিষয়ে স্যার নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনারা আসেন। এই ছিল নিরাশার অন্ধকারে একটু আশার আলো শিমুল-সোমা দম্পতির জন্য।
তাদের সঞ্চয়, আয়ের দিকে তাকালে আস্থার মাটি পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে! একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন শিমুল সরকার। সোমা একটি কলেজের শিক্ষক।
কেবলমাত্র সার্জারিতেই খরচ হবে সাড়ে আট থেকে নয় হাজার ডলারের মতো। এর বাইরে যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য খরচ।
ছেলের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শিমুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন। তারপরই শিমুল সরকারের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। শিমুল বলেন, টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছি, বাকিটা দেখা যাক।
পোস্টটির শেষে তার অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়েছেন। যে কেউ বাড়িয়ে দিতে পারেন সহযোগিতার হাত।
যেভাবে সহায়তা করতে পারেন:
হিসাব নাম: এস. এস বিদ্যা বরুণ সরকার।
হিসাব নম্বর: ১৩৬, ১০১, ৬০৬৩৪।
ব্যাংক: ডাচ বাংলা ব্যাংক, নয়াবাজার শাখা।
শিমুল সরকারের বিকাশ অ্যাকাউন্ট: ০১৭১৭২৩২৬১৬ (ব্যক্তিগত)।
সারাবাংলা/এটি