‘রাষ্ট্রীয় স্থাপনার জন্য হুমকি শিশুপার্ক, এই জঞ্জাল সরান’
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৪৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সংলগ্ন শিশু পার্ক অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ‘জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক’ নাগরিক উদ্যোগ নামে একটি সংগঠন। মানববন্ধন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এই শিশু পার্ককে জঞ্জাল আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এই পার্ক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থাপনার জন্য হুমকি। পার্কে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সার্কিট হাউস এবং চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচ তারকা রেডিসন ব্লু লক্ষ্য করে নাশকতা ঘটাতে পারে।’
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর কাজির দেউড়িতে শিশু পার্কের সামনে এই মানববন্ধন হয়েছে। এতে মানববন্ধন নাগরিক উদ্যোগের সংগঠকরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকেরা ছিলেন।
মানববন্ধনে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘এখানে যে পুরনো সার্কিট হাউসটি আছে সেটি শুধু বাংলাদেশের একটি অনন্য ঐতিহ্য নয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনন্য স্থাপত্য। আর এর সামনের খোলা সবুজ চত্বরটিও ছিল সেই ঐতিহ্যের অংশ। দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার যখন সূচনা হয়, তখন এই চত্বরে নির্মিত হয়েছিল বিজয় মঞ্চ। সেই মঞ্চে সারাদেশ থেকে আসা রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধারা প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতেন।’
‘১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি যখন জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এল, তাদের এই বিজয়মেলার কার্যক্রম সহ্য হচ্ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ইন্ধনে বিএনপির মেয়র মীর নাছির বিজয় মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার জন্য এই সবুজ চত্বরে একটা শিশু পার্ক গড়ে তোলেন। এই জায়গা সেনাবাহিনীর। ২৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে শিশুপার্ক গড়ে তোলে সিটি করপোরেশন, যেটি বেসরকারি খাতে পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়।’
সুজন আরও বলেন, ’২৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরিবেশবাদীসহ চট্টগ্রামের নাগরিকেরা সবাই আবেদন করেছিলেন, এই চুক্তি যেন আর বাড়ানো না হয়। কিন্তু কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আগে শিশুপার্ক ঘিরে লোহার গ্রিল ছিল, এখন দেওয়া হয়েছে দেয়াল। এজন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য পুরাতন সার্কিট হাউস আর দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু এবং সার্কিট হাউস রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শিশু পার্কের জন্য এর নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়েছে। টিকিট কেটে যে কেউ এই পার্কে ঢুকতে পারবে এবং নাশকতা করতে পারবে।’
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্দেশে সুজন বলেন, ‘আপনাকে মনে রাখতে হবে- মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার জন্য শিশুপার্কের নামে এই জঞ্জাল বানিয়েছিল বিএনপি। এখন বিএনপি ক্ষমতায় নাই। এই জঞ্জাল সরিয়ে ফেলুন। আগামী আগস্ট পর্যন্ত আপনার মেয়াদ আছে। চুক্তি বাতিল করুন। চট্টগ্রামবাসী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।’
সেনাবাহিনীকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই জায়গা আপনাদের। জনগণের পক্ষ থেকে অনুরোধ, এই জঞ্জাল সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। শহরের মানুষকে একটু সবুজ নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেন।’
১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে সুবিশাল চত্বরটি ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর এই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি তোলা হয়েছিল, শিশুপার্কের ইজারা যেন আর বাড়ানো না হয়। সবুজ উদ্যানটিকে যেন আবারও ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু সম্প্রতি আবারও ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের কাছে তিন একর আয়তনের এই জায়গার ইজারা নবায়ন করে সিটি করপোরেশন। সেখানে নতুন আঙ্গিকে শিশু পার্ক সংস্কারের কাজ চলছে।