Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গোপনে মমতাজ ভিলায় টাকা জমাতেন এনু-রুপন


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:৩৭

ঢাকা: অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা ও সোনাদানা রক্ষা করতে সেগুলো নিয়ে ওয়ারীর মমতাজ ভিলায় জমিয়ে রাখতেন গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের মুখে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন ‘মমতাজ ভিলা’ র‌্যাব ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা ও এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওয়ারীর একটি বাসা থেকে পাঁচ কোটি টাকা ও আট কেজি স্বর্ণ জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পাঁচ মাস পর এনু-রুপনের মমতাজ ভিলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। ২৬ কোটি টাকার পাশাপাশি ওই বাসা থেকে পাঁচ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) অভিযান শেষে দুপুরে নারিন্দা ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনের সড়কে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, ‘নগদ টাকা ও স্বর্ণের বাইরে ৯ হাজার ৩০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ১ হাজার ৯৫ চাইনিজ রেনমিনবি, ৫ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম আরব আমিরাতের বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে। এ সব টাকা, স্বর্ণ ও বিদেশি মুদ্রা আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হবে ‘

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি এনু-রুপনের বাড়ি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই বাসায় অভিযান চালানো হয়।’

র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এনু-রুপন দুই ভাই প্রথম অভিযানের পর এবং সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগপর্যন্ত ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ এর এই বাসাটিতে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করতেন। কখনওবা এই বাসাতেই রাত্রিযাপন করতেন।

বিজ্ঞাপন

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এনু-রুপন গ্রেফতারের আগে ওয়ারীর ১১৯/১ নম্বর বাসাটির সন্ধান জানত না কেউ। গত সেপ্টেম্বরে অন্তত ২৬ বাড়ির তথ্য শোনা গেলেও ১৫টি বাড়ির সন্ধান পেয়েছিল র‌্যাব। ওইসব বাসায় অভিযান চালানোর পর কয়েকটি বাড়িতে টাকা, স্বর্ণ ও বিদেশি মুদ্রা মেলে। এনু-রুপন সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আরও কিছু তথ্য পায় র‌্যাবের গোয়েন্দারা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই পাঁচমাস পর আবার অভিযান চালানো হয়।

অভিযানকারী র‌্যাবের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এনু-রুপনের প্রত্যেকটি বাসাতেই মমতাজ ভিলা লেখা রয়েছে। ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের আশেপাশে অন্তত ১২টি বাড়িতে মমতাজ ভিলা লেখা রয়েছে। সবগুলোই এনু-রুপনের কিনা তা নিশ্চিত হতে সময় লাগছে। যার ফলে অভিযান চালাতেও দেরি হচ্ছে। একই রোডে আরেক বাসায় এর আগেও অভিযান চালানো হয়েছিল। তার পাশে আরেকটি ১০তলা মমতাজ ভিলা রয়েছে। সেখানেও অভিযান চালানোর কথা রয়েছে। ১০৬ মমতাজ ভিলাটিও এনু-রুপনের বলে নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব।’

১০৬, মমতাজ ভিলার ওই বাসাটিতে নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত সবগুলো ফ্লাটেই তারা নিজেরা বাস করেন। কোনো একটি বাসাও ভাড়া দেননি তারা। একটি ফ্লোরে নাচের স্টুডিও করা আছে, একটিতে মিটিং রুম বানানো হয়েছে। চার ও পাঁচতলায় তারা দুই ভাই থাকতেন। অন্য ফ্লোরগুলোতে নিজেদের লোকজন থাকতেন। এরা তাদের হয়ে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা।

এনু-রুপনকে কেরানীগঞ্জ থেকে সিআইডি গ্রেফতারের পর জানিয়েছিল, গ্রেফতারের সময় এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার কাছ থেকে ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজপত্র ও ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা থাকার প্রমাণ পাওয়া পেয়েছে। এ ছাড়া নগদ ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করা হয়। অন্তত ২৬ টি বাড়ির তথ্য জানতে পারে সিআইডি।

মঙ্গলবার ভোর থেকে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘১১৯/১ এর বাসাটিতে তালা ভেঙে প্রবেশ করা হয়। ছয় তলা ভবনটিতে কোনো লোকের বাস ছিল না। ওপরের তলাগুলোতে কোনো কিছু পাওয়া না গেলেও নিচ তলায় এসে দুইটি ট্রাঙ্ক, পাঁচটি লোহার সিন্দুক (ভল্ট), ১৫টি বস্তা ও একটি টিভি টেবিল পাওয়া যায়। সেখানে ক্যাসিনো সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। এরপর একটি ট্রাঙ্ক ফাঁকা পাওয়া যায়। আরেকটি ট্রাঙ্ক টাকায় ভর্তি ছিল। বস্তাগুলোতেও ছিল শুধু টাকা আর টাকা। সিন্দুকগুলো খুললে টাকা আর স্বর্ণালঙ্কার বেরিয়ে আসে। একটি সিন্দুকের মধ্যে বিদেশি মুদ্রাগুলো ছিল। সব টাকাই ছিল এক হাজার নোটের বান্ডিল।’

র‌্যাব জানিয়েছে, এসব টাকা কোথাও সরাতে না পেরে তড়িঘড়ি করে বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল এনু-রুপন। এ রকম আরও কোনো বাড়িতে টাকা রয়েছে কি না তার খোঁজ করছে র‌্যাব।

আরও পড়ুন
ক্যাসিনোকাণ্ড: দুই ভাই এনু-রুপনকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ
এনু-রুপন সমর্থকদের হামলায় সাংবাদিক আহত, আটক এক
এনু-রুপন ৪ দিনের রিমান্ডে
যেভাবে গ্রেফতার ক্যাসিনো হোতা দুই ভাই এনু-রুপন
ক্যাসিনোকাণ্ড: এনু-রুপন গ্রেফতার, পালাতে চেয়েছিলেন দেশ ছেড়ে
ক্যাসিনো ছাড়া আর কোনো পেশায় ছিলেন না এনু-রুপন

 

অবৈধ উপার্জন এনু-রুপন ক্যাসিনোকাণ্ড দুই ভাই র‍্যাব র‌্যাবের অভিযান শুদ্ধি অভিযান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর